Skip to main content

সূরা আন-নাবা এর (৩১-৩৬) আয়াতের তাফসীর, আলোচ্য বিষয়: কিয়মতের দিন সৌভাগ্যবান মুমিনদের প্রতিদান।

By দৈনিক তাফসীর No Comments

إِنَّ لِلْمُتَّقِينَ مَفَازًا (31) حَدَائِقَ وَأَعْنَابًا (32) وَكَوَاعِبَ أَتْرَابًا (33) وَكَأْسًا دِهَاقًا (34) لَا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَلَا كِذَّابًا (35) جَزَاءً مِنْ رَبِّكَ عَطَاءً حِسَابًا (36) [سورة النبأ: 31-36]

আয়াতের আলোচ্য বিষয়: কিয়মতের দিন সৌভাগ্যবান মুমিনদের প্রতিদান।

আয়াতের সরল অনুবাদ:

(৩১) নিশ্চয় মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে সফলতা।
(৩২) উদ্যানসমূহ এবং আঙ্গুরসমূহ।
(৩৩) এবং সমবয়স্কা উদ্ভিন্ন যৌবনা তরুণী।
(৩৪) আর পরিপূর্ণ পানপাত্র।
(৩৫) সেখানে তারা কোন অসার ও মিথ্যা কথা শুনবে না।
(৩৬) তোমার রবের পক্ষ থেকে প্রতিফল, যথোচিত দানস্বরুপ।

আয়াতের ভাবার্থ:

নিশ্চয় যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং আখেরাত ভিত্তিক জীবনযাপন করে তারা জাহান্নাম থেকে নাজাত পেয়ে স্থায়ী জান্নাত লাভের মাধ্যমে মহাসফলতা লাভ করবেন। সেখানে তাদের আরাম-আয়েসের জন্য ফুলে-ফলে সুশোভিত উদ্যানসমূহ রয়েছে এবং খাবার হিসেবে রয়েছে সুঘ্রানযুক্ত আঙ্গুরসমূহ। এবং উপভোগের জন্য রয়েছে সমবয়স্কা উদ্ভিন্ন যৌবনা তরুণী। এছাড়াও পানীয় হিসেবে রয়েছে পরিপূর্ণ স্বচ্ছ পানপাত্র, যা অনবরত থাকবে। সেখানে তারা কোন অসার ও মিথ্যা কথা শুনবে না। উল্লেখিত পুরস্কারগুলো তাদের রবের পক্ষ থেকে প্রতিফল এবং যথোচিত দানস্বরুপ। (আইসার আল-তাফাসীর: ৫/৫০৫-৫০৬, আল-তাফসীর আল-মোয়াস্সার: ১/৫৮৩, আল-মোন্তাখাব: ৮৭৯) ।

সূরা আন-নাবা এর (৩১-৩৬) আয়াতের অস্পষ্ট শব্দের ব্যাখ্যা:

(مَفَازًا) ‘সফলতা’, শব্দটি ‘ক্রিয়ামূল’ অথবা ‘স্থান বাচক শব্দ’ হতে পারে। অত্র আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় ইমাম ফখরুদ্দীন আল-রাযী (র.) কয়েকটি মত বর্ণনা করেছেন:
(ক) এর দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি বা জান্নাত লাভকে বুঝানো হয়েছে।
(খ) আরেকদল তাফসীরকারক বলেন: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: জাহান্নাম থেকে নাজাত পাওয়া। ইমাম রাযী (র.) প্রথম মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (আল-তাফসীর আল-কাবীর: ৩১/২১) । তবে এখানে দুইটি মতের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। এ ধরণের মতবিরোধকে ‘ইখতেলাফ তানাওয়ী’ বলে।

(دِهَاقًا) ‘পরিপূর্ণ’, তাফসীরকারকগণ শব্দটির কয়েকটি অর্থ করেছেন:
(ক) ইবনু আব্বাস (রা.) শব্দটিকে বিভিন্ন সময়ে ‘পরিপূর্ণ’ অর্থে ব্যবহার করেছেন।
(খ) আবু হুরায়রা (রা.) বলেন: শব্দটির অর্থ হলো ‘অনবরত’ বা ‘বিরামহীন’।
(গ) দাহ্হাক (র.) বলেন: এর অর্থ হলো: ‘স্বচ্ছ’। (আল-তাফসীর আল-কাবীর: ৩১/২২) । তবে এখানে তিনটি মতকেই একই সাথে উদ্দেশ্য করা যায়, কারণ কোরআনের বিভিন্ন আয়াত থেকে বুঝা যায়, জান্নাতের পানীয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হবে: তা অধিক স্বচ্ছ, পানপাত্র ভর্তি থাকবে এবং অনবরত চলবে। (আল্লাহই ভালো জানেন) ।

সূরা আন-নাবা এর (৩১-৩৬) আয়াতের সাথে পূর্ববর্তী আয়াতের সম্পর্ক:

পূর্ববর্তী আয়াতাবলী তথা (১৭-৩০) নাম্বার আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে যে, কিয়ামত কখন সংগঠিত হবে তা পূর্ব নির্ধারিত, যা সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন। অনুরুপভাবে কিয়ামতের অবস্থা এবং জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আর অত্র আয়াতসমূহ তথা (৩১-৩৬) নাম্বার আয়াতে কিয়ামতের দিন মোত্তাকীদের পুরস্কারের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং পূর্বের আয়াতের সাথে অত্র আয়াতাবলীর সম্পর্ক সুস্পষ্ট। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩০/২২) ।

সূরা আন-নাবা এর (৩১-৩৬) আয়াতের শিক্ষা:

১। অত্র সূরার (৩১-৩৫) নাম্বার আয়াতে যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং আখেরাত ভিত্তিক জীবনযাপন করে তাদের জন্য পাঁচটি পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে:
(ক) তারা জাহান্নাম থেকে নাজাত পেয়ে স্থায়ী জান্নাত লাভের মাধ্যমে মহাসফলতা লাভ করবেন।
(খ) সেখানে তাদের আরামআয়েসের জন্য ফুলে-ফলে সুশোভিত উদ্যানসমূহ রয়েছে এবং খাবার হিসেবে রয়েছে সুঘ্রানযুক্ত আঙ্গুরসমূহ।
(গ) উপভোগের জন্য রয়েছে সমবয়স্কা উদ্ভিন্ন যৌবনা তরুণী।
(ঘ) পানীয় হিসেবে রয়েছে পরিপূর্ণ স্বচ্ছ পানপাত্র, যা অনবরত থাকবে।
(ঙ) সেখানে তারা কোন অসার ও মিথ্যা কথা শুনবে না। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩০/২৪) ।
২। ছত্রিশ নাম্বার আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, কারো পক্ষে শুধু তার নেকআমলের বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করা সম্ভব নয়, বরং জান্নাতে প্রবেশ করতে হলে নেকআমলের পাশাপাশি আল্লাহর রহমত প্রত্যাশী হতে হবে। এক কথায় বলা যায় জান্নাতে প্রবেশের জন্য দুইটি জিনিস প্রয়োজন হবে: (ক) নেকআমল এবং (খ) আল্লাহর দয়া। (আল্লাহই ভালো জানেন) ।

আয়াতাবলীর আমল:

(ক) পুনরুত্থান দিবসের প্রতি ঈমান এনে আখেরাত ভিত্তিক জীবনযাপন করা।
(খ) আল্লাহ তায়ালার মহা পুরস্কারের আশায় বেশী বেশী নেকআমল করা এবং তাঁর রহমত পাওয়ার জন্য দোয়া করা।

সূরা আন-নাবা এর (১৭-৩০) আয়াতের তাফসীর, আলোচ্য বিষয়: কিয়ামতের অবস্থা এবং সেখানকার শাস্তির ধরণ।

By দৈনিক তাফসীর No Comments

إِنَّ يَوْمَ الْفَصْلِ كَانَ مِيقَاتًا (17) يَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ فَتَأْتُونَ أَفْوَاجًا (18) وَفُتِحَتِ السَّمَاءُ فَكَانَتْ أَبْوَابًا (19) وَسُيِّرَتِ الْجِبَالُ فَكَانَتْ سَرَابًا (20) إِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتْ مِرْصَادًا (21) لِلطَّاغِينَ مَآبًا (22) لَابِثِينَ فِيهَا أَحْقَابًا (23) لَا يَذُوقُونَ فِيهَا بَرْدًا وَلَا شَرَابًا (24) إِلَّا حَمِيمًا وَغَسَّاقًا (25) جَزَاءً وِفَاقًا (26) إِنَّهُمْ كَانُوا لَا يَرْجُونَ حِسَابًا (27) وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا كِذَّابًا (28) وَكُلَّ شَيْءٍ أَحْصَيْنَاهُ كِتَابًا (29) فَذُوقُوا فَلَنْ نَزِيدَكُمْ إِلَّا عَذَابًا (30) [سورة النبأ: 17-30]

আয়াতের আলোচ্য বিষয়: কিয়ামতের অবস্থা এবং সেখানকার শাস্তির ধরণ।

আয়াতের সরল অনুবাদ:

(১৭) নিশ্চয় ফয়সালার দিন নির্ধারিত আছে।

(১৮) সেদিন সিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখন তোমরা দলে দলে আসবে।

(১৯) আর আকাশ খুলে দেওয়া হবে, ফলে তা বহু দ্বারবিশিষ্ট হবে।

(২০) আর পাহাড়সমূহকে চলমান করা হবে, ফলে সেগুলো মরীচিকা হয়ে যাবে।

(২১) নিশ্চয় জাহান্নাম গোপন ফাঁদ।

(২২) সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য প্রত্যাবর্তন স্থল।

(২৩) সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে।

(২৪) সেখানে তারা কোন শীতলতা আস্বাদন করবে না এবং না কোন পানীয়।

(২৫) ফুটন্ত পানি ও পুঁজ ছাড়া।

(২৬) উপযুক্ত প্রতিফল স্বরুপ।

(২৭) নিশ্চয় তারা হিসেবের আশা করতো না।

(২৮) আর তারা আমার আয়াতসমূহকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেছিল।

(২৯) আর সবকিছুই আমি লিখিতভাবে সংরক্ষণ করেছি।

(৩০) সুতরাং তোমরা স্বাদ গ্রহণ করো, আমি তো কেবল তোমাদের আযাবই বৃদ্ধি করবো।

আয়াতের ভাবার্থ:

নিশ্চয় পূর্বে যারা এসেছিলো এবং পরে যারা আসবে সকলের জন্য কিয়ামতের দিন নির্ধারিত রয়েছে, যেদিন সকল প্রাণীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। সেদিন সিঙ্গায় দ্বিতীয় ফুঁক দেওয়া হবে, তখন মানুষ তাদের দলনেতার সাথে দলে দলে হাশরের ময়দানে জড়ো হবে। আর আকাশ খুলে দেওয়া হবে, ফলে তা বহু দ্বারবিশিষ্ট হবে এবং সেখান থেকে ফেরেশতারা হাশরের ময়দানে অবতরণ করবে। আর পাহাড়সমূহকে চলমান করা হবে, ফলে সেগুলো মরীচিকার রুপ ধারণ করে নিশ্চিন্থ হয়ে যাবে। নিশ্চয় জাহান্নাম পাপীদের জন্য গোপন ফাঁদ এবং সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য প্রত্যাবর্তন স্থল। সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে। উপযুক্ত প্রতিফল স্বরুপ সেখানে তারা ফুটন্ত পানি ও পুঁজ ছাড়া কোন শীতলতা এবং কোন পানীয় আস্বাদন করবে না। নিশ্চয় তারা দুনিয়ায় হিসাবের আশা করতো না। আর তারা আমার আয়াতসমূহকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করতো। আর আমি তাদের সকল অপকর্মকে লিখিতভাবে সংরক্ষণ করেছি। সুতরাং তারা এ আযাবের স্বাদ গ্রহণ করবে, আমি তো কেবল তাদের আযাবই বৃদ্ধি করবো। (আইসার আল-তাফাসীর: ৫/৫০৩-৫০৪, আল-তাফসীর আল-মোয়াস্সার: ১/৫৮২, আল-মোন্তাখাব: ৮৭৯) ।

সূরা আন-নাবা এর (১৭-৩০) আয়াতের অস্পষ্ট শব্দের ব্যাখ্যা:

(بَرْدًا) ‘ঠান্ডা’, অধিকাংশ তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অত্র আয়াতাংশ দ্বারা দুইটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে:
(ক) জাহান্নামের আযাব শিথিল করা, সুতরাং আয়াতের অর্থ হবে: “তাদের জন্য সেখানে জাহান্নামের আযাব শিথিল করা হবে না”।
(খ) তন্দ্রা বা ঘুম, সুতরাং আয়াতের অর্থ হবে: “তারা সেখানে ঘুমানোর সুযোগ পাবে না”। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩০/১৯, আইসার আল-তাফাসীর: ৫/৫০৩) ।

সূরা আন-নাবা এর (১৭-৩০) আয়াতের সাথে পূর্ববর্তী আয়াতের সম্পর্ক:

পূর্ববর্তী আয়াত তথা (১-১৬) নাম্বার আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা এ ইউনিভার্সকে পুরোপুরি ধ্বংস করে নুতন এক জগৎ সৃষ্টি করে সেখানে সকল প্রাণীকে জড়ো করে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাতে সক্ষম। আর অত্র আয়াতাবলী তথা (১৭-৩০) নাম্বার আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে যে, কিয়ামত কখন সংগঠিত হবে তা পূর্ব নির্ধারিত, যা সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন। অনুরুপভাবে কিয়ামতের অবস্থা ও জাহান্নামের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সুতরাং পূর্বের আয়াতের সাথে অত্র আয়াতাবলীর সম্পর্ক সুস্পষ্ট। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩০/১৬) ।

সূরা আন-নাবা এর (১৭-৩০) আয়াতের শিক্ষা:

১। অত্র সূরার সতের নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে কিয়ামতের দিন পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকলের জন্য নির্ধারিত, যার জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছে রয়েছে। অতঃপর (১৮-২০) নাম্বার আয়াতে কিয়ামতের তিনটি ভয়াবহ অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।
(ক) ইসরাফীল (আ.) এর সিঙ্গায় দ্বিতীয় ফ‚ঁকের পরে সকল প্রাণী কবর থেকে উঠে হাশরের ময়দানে জড়ো হবে। আর মানুষ তাদের নেতার সাথে দলে দলে ময়দানে মাহশারে একত্র হবে। এ সম্পর্কে কোরআন মাজীদের সূরা ইসরা এর একাত্তর নাম্বার আয়াতে এসেছে:
(يَوْمَ نَدْعُو كُلَّ أُنَاسٍ بِإِمَامِهِمْ فَمَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَأُولَئِكَ يَقْرَءُونَ كِتَابَهُمْ وَلَا يُظْلَمُونَ فَتِيلًا) [الإسراء: ৭১] .
অর্থাৎ: “যেদিন আমি প্রত্যেক জাতিকে তাদের নেতাদের সাথে ডাকবো, সেদিন যাদের আমলনামা ডানহাতে দেওয়া হবে, তারা পড়া শুরু করবে, তাদের উপর সেদিন বিন্দুমাত্র যুলম করা হবে না” (সূরা ইসরা: ৭১) ।
(খ) সেদিন আকাশ ফেটে বহু দরজা বিশিষ্ট হবে এবং ফেরেশতাগণ আকাশ থেকে অবতরণ করবে। এর মাধ্যমে বিশ্ব রুপরেখা এবং রীতিনীতি সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে। আর আল্লাহ তায়ালা অস্থায়ী রাজাবাদশাহদের কাছ থেকে সকল ক্ষমতা গ্রহণ করে তিনি একক ক্ষমতার অধিকারী হবেন। এ সম্পর্কে সূরা ইনফিতার এবং সূরা ইনশিক্বাক এর প্রথম আয়াতাবলীতে বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়াও সূরা ফুরকান এর পচিশ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে:
(وَيَوْمَ تَشَقَّقُ السَّمَاءُ بِالْغَمَامِ وَنُزِّلَ الْمَلَائِكَةُ تَنْزِيلًا (২৫) الْمُلْكُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ لِلرَّحْمَنِ وَكَانَ يَوْمًا عَلَى الْكَافِرِينَ عَسِيرًا (২৬)) [سورة الفرقان: ২৫-২৬].
অর্থাৎ: “এবং যেদিন আকাশ তার মেঘমালা নিয়ে ফেটে পড়বে, আর দলে দলে ফেরেশতারা যমীনে নেমে আসবে। সেদিন চুড়ান্ত বাদশাহী হবে একমাত্র দয়াময় আল্লাহ তায়ালার জন্যে, যারা তাকে অস্বীকার করেছে তাদের উপর সেদিনটি হবে খুবই কঠিন” (সূরা ফুরকান: ২৫) ।
(গ) পাহাড়গুলোকে তাদের জায়গা থেকে সরিয়ে ফেলে সমতল করা হবে, ফলে তা মরীচিকার মতো হয়ে যাবে (আন-নাবা: ২০), তা সম্পূর্ণরূপে চ‚র্ণ-বিচ‚র্ণ হয়ে ধুলাবালিতে রুপান্তরিত হবে (ওয়াক্বিয়া: ৫-৬) এবং তা এক পর্যায়ে বাতাশে ধুনা তুলার মতো উড়তে থাকবে (আল-ক্বারিয়াহ: ৫/ ত্বহা: ১০৫/ আন-নমল: ৮৮) ।
২। অত্র সূরার (২১-২৬) আয়াতে কিয়ামতের দিন হতভাগা কাফের-মোশরেকদের ও সীমালঙ্ঘনকারীদের পাঁচটি ভয়াবহ অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে:
(ক) জাহান্নাম তাদের জন্য গোপন ফাঁদ হবে।
(খ) জাহান্নাম হবে তাদের একমাত্র আবাসস্থল।
(গ) তারা সেখানে যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে।
(ঘ) তাদের জন্য সেখানে ঘুমানোর কোন সুযোগ থাকবে না, অথবা তাদের জন্য শাস্তিকে বিন্দুমাত্র শিথিল করা হবে না।
(ঙ) জাহান্নামে তাদের পানীয় হবে ফুটন্ত পানি ও পুজ।
৩। অত্র সূরার (২৭-২৮) নাম্বার আয়াতে কাফিররা উল্লেখিত শাস্তির উপযোগী হওয়ার দুইটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে:
(ক) দুনিয়ায় থাকা কালে তারা মনে করতো কিয়ামতের দিন কোন হিসাবনিকাশ হবে না।
(খ) তারা আল্লাহর আয়াতবলীকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করতো।
৪। উনত্রিশ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে: আল্লাহ তায়ালা সকলের কৃতকর্ম কিতাবে লিখিত আকারে সংরক্ষণ করেন, যার আলোকে কিয়ামতের দিন বিচার হবে।
৫। ত্রিশ নাম্বার আয়াতে কাফিররা জাহান্নামে প্রবেশের পর তাদেরকে লাঞ্চিত করার জন্য একটি ঘোষণা দেওয়া হবে: তোমরা দুনিয়াতে আল্লাহর অবাধ্য ছিলে, এখন জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করো, আজ তোমাদের জন্য শাস্তি কেবল বাড়ানো হবে। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) বলেন: জাহান্নামীদের জন্য অত্র আয়াতের চেয়ে অধিক কষ্টের আয়াত আর দ্বিতীয়টি নেই। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩০/১৯) ।

আয়াতাবলীর শিক্ষা:

(ক) পুনরুত্থান দিবসের প্রতি ঈমান এনে আখেরাত ভিত্তিক জীবনযাপন করা।
(খ) আল্লাহর আয়াতাবলীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।

বাজার/ সপিং মলে প্রবেশের দোয়া:

By আজকের দোয়া No Comments

বাজার বা সপিং মলে প্রবেশের সময় নিম্নের দোয়া পড়তে হয়:

.لَا إِلَه إِلَّا الله وَحده لَا شريك لَهُ، لَهُ الْملك وَله الْحَمد، يحي وَيُمِيت بِيَدِهِ الْخَيْر، وَهُوَ على كل شَيْء قدير

অর্থাৎ: “আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁর জন্য সকল প্রশংসা, তিনি জীবন এবং মৃত্যু দান করেন, তাঁরই হাতে সকল কল্যান। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান”।

ওমার ইবনু খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:  যে ব্যাক্তি উল্লেখিত দোয়াটি সপিং মলে ঢুকার সময় পাঠ করে, তার আমলনামায় এক লক্ষ নেকী লেখা হয়। (ইবনু মাজাহ: ২২৩৫) ।

শায়খ আলবানী (র.) হাদীসটি কে হাসান বলেছেন।

সূরা আন-নাবা এর (১-১৬) আয়াতের তাফসীর, আলোচ্য বিষয়: পুনরুত্থান দিবস এবং তা সংগঠিত হওয়ার প্রমাণ।

By দৈনিক তাফসীর No Comments

عَمَّ يَتَسَاءَلُونَ (1) عَنِ النَّبَإِ الْعَظِيمِ (2) الَّذِي هُمْ فِيهِ مُخْتَلِفُونَ (3) كَلَّا سَيَعْلَمُونَ (4) ثُمَّ كَلَّا سَيَعْلَمُونَ (5) أَلَمْ نَجْعَلِ الْأَرْضَ مِهَادًا (6) وَالْجِبَالَ أَوْتَادًا (7) وَخَلَقْنَاكُمْ أَزْوَاجًا (8) وَجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا (9) وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِبَاسًا (10) وَجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا (11) وَبَنَيْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعًا شِدَادًا (12) وَجَعَلْنَا سِرَاجًا وَهَّاجًا (13) وَأَنْزَلْنَا مِنَ الْمُعْصِرَاتِ مَاءً ثَجَّاجًا (14) لِنُخْرِجَ بِهِ حَبًّا وَنَبَاتًا (15) وَجَنَّاتٍ أَلْفَافًا (16) [سورة النبأ: 1-16]

 

আয়াতের আলোচ্য বিষয়: পুনরুত্থান দিবস এবং তা সংগঠিত হওয়ার প্রমাণ।

আয়াতের সরল অনুবাদ:
(১) কোন বিষয় সম্পর্কে তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করছে?
(২,৩) মহাসংবাদটি সম্পর্কে, যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে।
(৪) কখনও নয়, তারা অচিরেই জানতে পারবে।
(৫) আবারও বলি, কখনও নয়, তারা অচিরেই জানতে পারবে।
(৬,৭) আমি কি যমীনকে শয্যা এবং পর্বতসমূহকে পেরেক বানাইনি?
(৮) আর আমি তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি।
(৯) আর আমি তোমাদের নিদ্রাকে বিশ্রাম বানিয়েছি।
(১০) আর রাত্রকে বানিয়েছি আবরণ।
(১১) আর দিনকে বানিয়েছি জীবিকার্জনের সময়।
(১২) আর আমি তোমাদের উপর বানিয়েছি সাতটি সুদৃঢ় আকাশ।
(১৩) আর আমি সৃষ্টি করেছি উজ্জ্বল একটি প্রদীপ।
(১৪,১৫) আর আমি মেঘমালা থেকে প্রচুর পানি বর্ষণ করেছি, যাতে আমি তা দিয়ে শস্য ও উদ্ভিদ উৎপাদন করতে পারি।
(১৬) আরো উৎপন্ন করতে পারি ঘন উদ্যানসমূহ।
(আল-কোরআনুল কারীম সরল অনুবাদ: ১২২৬-১২২৭, আহাসানুল বায়ান: ১০৫০-১০৫১, কোরআন মাজীদ সহজ-সরল অনুবাদ: ৯৬৫-৯৬৬) ।

আয়াতের ভাবার্থ:
কোন বিষয় সম্পর্কে কোরাইশ গোত্রের কাফের-মোশরেকরা পরস্পরে জিজ্ঞাসাবাদ করছে? অবশ্যই তারা রাসূলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক নিয়ে আসা কোরআনকে সম্পর্কে মতভেদ করছে, কারণ এ কোরআন পুনরুত্থান দিবস সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন: এ ধরণের মতভেদ করা কখনও ঠিক নয়, তারা অচিরেই পুনরুত্থান দিবসকে স্বচক্ষে দেখতে পাবে। আল্লাহ তায়ালা আবারও তাকীদ দিয়ে বলেছেন, এ ধরণের আচরণ কখনও ঠিক নয়, তারা অচিরেই এর ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে জানতে পারবে। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাঁর কুদরাত বর্ণনার মাধ্যমে পুনরুত্থান দিবস সংগঠিত হওয়ার যৌক্তিক দলীল পেশ পূর্বক বলেন: তোমরা কি দেখছোনা আমি যমীনকে সমতল আকারে তৈরি করে তোমাদের জন্য শয্যা হিসেবে নির্ধারণ করেছি এবং পর্বতসমূহকে যমীনের সাথে পেরেক মেরে দিয়েছি যাতে তা স্থির থাকে। আর আমি প্রজননের জন্য তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি। আর আমি নিদ্রাকে তোমাদের জন্য বিশ্রাম বানিয়েছি। আর রাত্রকে বানিয়েছি আবরণ, যাতে আরামে বিশ্রাম নিতে পারো। আর দিনকে বানিয়েছি জীবিকার্জনের সময়, যাতে তোমরা জীবিকার্জন করে আরাম আয়েশে জীবনযাপন করতে পারো। এছাড়াও আমি তোমাদের উপর সাতটি সুদৃঢ় আকাশকে যমীনের জন্য ছাদ করেছি, যা তারকারাশি দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। তোমাদেরকে বাচিয়ে রাখার জন্য সূর্য নামক একটি উজ্জ্বল প্রদীপ সৃষ্টি করেছি। অনুরুপভাবে আমি মেঘমালা থেকে প্রচুর পানি বর্ষণ করেছি, যাতে আমি তা দিয়ে তোমাদের জীবিকার জন্য শস্য, উদ্ভিদ এবং ঘন উদ্যানসমূহ উৎপাদন করতে পারি। উল্লেখিত ক্ষমতা দেখেও তোমরা বিশ্বাস করছো না যে, যিনি এত কিছু করতে পেরেছেন, তিনি অবশ্যই পুনরুত্থান দিবসে মানবজাতিকে পুনর্জীবিত করে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাতে পারবেন। (আইসার আল-তাফাসীর: ৫/৫০১-৫০২, আল-তাফসীর আল-মোয়াস্সার: ১/৫৮২, আল-মোন্তাখাব: ৮৭৭-৮৭৮) ।

আয়াতের অস্পষ্ট শব্দের ব্যাখ্যা:
(النَّبَإِ الْعَظِيمِ) ‘মহাসংবাদ’, অত্র আয়াতাংশ দ্বারা উদ্দেশ্য কি? এ বিষয়ে তাফসীরকারকদের থেকে দুইটি মত পাওয়া যায়: (ক) আল-কোরআন আল-কারীম এবং (খ) কিয়ামতের দিন। (গরীব আল-কোরআন, ইবনু কুতাইবা: ৪৩৪) ।
তবে ইমাম ইবনু কাছীর (র.) দ্বিতীয় মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন, কারণ তৃতীয় নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে: যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করে। (তাফসীর ইবনু কাছীর: ৮/৩০২) ।
(سِرَاجًا وَهَّاجًا) ‘একটি উজ্জ্বল প্রদীপ’, অত্র আয়াতাংশ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: সূর্য। (গরীব আল-কোরআন, ইবনু কুতাইবা: ৪৩৪) ।
(سَبْعًا) ‘সাতটি’, অত্র আয়াতাংশে সাত সংখ্যা দ্বারা সাত আকাশকে বুঝানো হয়েছে। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩০/১১) ।

অত্র সূরার সাথে পূর্ববর্তী সূরার সম্পর্ক:
পূর্ববর্তী সূরা তথা সূরা মুরসালাত এ পুনরুত্থান দিবস সংগঠিত করা আল্লাহ তায়ালার জন্য খুবই সহজ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আর অত্র সূরা তথা সূরা আন-নাবা তেও একই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। (তাফসীর মাওজূয়ী, মোস্তফা মুসলিম: ১০/৩) ।

সূরা আন-নাবা এর (১-২) আয়াত অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট:
ইবনু জারীর আততবারী (র.) হাসান (র.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) রিসালাতের দায়িত্ব নিয়ে প্রেরিত হলে মক্কার কাফের-মোশরেকরা নিজেদের মধ্যে কানাকানি শুরু করে দেয়। তখন আল্লাহ তায়ালা অত্র সূরার প্রথম দুইটি আয়াত অবতীর্ণ করেন। (লুবাব আল-নুক‚ল, সুয়ূতী: ৩৫১) ।

সূরা আন-নাবা এর (১-১৬) আয়াতের শিক্ষা:
১। অত্র সূরার (১-৩) নাম্বার আয়াতে কোরআন এবং পুনরুত্থান দিবসকে মহান বিষয় আখ্যা দেওয়া হয়েছে। অনুরুপভাবে পুনরুত্থান দিবস সংগঠিত হবে মর্মে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
২। অত্র সূরার (৪-৫) আয়াতে বলা হয়েছে যে, যারা কোরআন ও পুনরুত্থান দিবসকে অস্বীকার করে, তারা রাসূলুল্লাহ (সা.) যে বিষয়ের সংবাদ দিয়েছেন তার সত্যতা অচিরেই জানতে পারবে।
৩। অত্র সূরার (৬-১৬) নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নয়টি বিষয়ে তাঁর অপরিসীম ক্ষমতা বর্ণনার মাধ্যমে পুনরুত্থান দিবস সংগঠিত করতে তিনি যে সক্ষম তার স্বপক্ষে যৌক্তিক দলীল পেশ করেছেন:
(ক) যমীনকে সমতল আকারে বিছানা স্বরুপ তৈরি করা।
(খ) পর্বতসমূহকে যমীনের সাথে পেরেক মেরে পৃথিবীকে স্থির রাখা।
(গ) প্রজননের জন্য মানবজাতিকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা।
(ঘ) নিদ্রাকে প্রাণীকুলের জন্য বিশ্রাম হিসেবে নির্ধারণ করা।
(ঙ) বিশ্রামকে আরামদায়ক বনানোর জন্য রাত্রকে আবরণ বানানো।
(চ) দিনকে জীবিকার্জনের সময় হিসেবে নির্ধারণ করা।
(ছ) সাতটি সুদৃঢ় আকাশকে যমীনের জন্য ছাদ বানিয়ে তা তারকারাশি দিয়ে সজ্জিত করা।
(জ) সৃষ্টিকুলকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সূর্য নামক একটি উজ্জ্বল প্রদীপ সৃষ্টি করা।
(ঝ) সৃষ্টিকুলের জীবিকার জন্য শস্য, উদ্ভিদ এবং ঘন উদ্যানসমূহ উৎপাদন করার লক্ষ্যে মেঘমালা থেকে পরিমিত পানি বর্ষণ করা।

আয়াতাবলীর শিক্ষা:
(ক) তাহাজ্জুদ সালাতে সূরা আন-নাবা তেলাওয়াত করা।
(খ) পুনরুত্থান দিবসের প্রতি ঈমান এনে আখেরাত ভিত্তিক জীবনযাপন করা।
(গ) কোন বিষয়ে নিজেদের ভিতর অতি কানাকানি না করে বিশেষজ্ঞদের স্মরনাপন্ন হওয়া।

সূরা আন নাবা এর পরিচয়:

By দৈনিক তাফসীর No Comments

সূরা আন নাবা এর পরিচয়:

সূরার নাম: আরবী ভাষায় প্রচলিত একটি নিয়ম হলো: একটি বড় বিষয় বা জিনিসের নাম রাখা হয় তার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত একটি ছোট অংশ দিয়ে। পবিত্র কোরআনের সূরার নামকরণের ক্ষেত্রেও তার বিপরীত হয়নি। এজন্য বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থ থেকে অত্র সূরার এমন পাঁচটি নাম পাওয়া যায়, যা সূরার মধ্যেই নিহিত রয়েছে। নামগুলো হলো:
(ক) ‘সূরা আম্মা’ সূরাটি অত্র শব্দ দিয়ে শুরু হওয়ার কারণে এ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
(খ) ‘সূরা আন নাবা’, শব্দটি সূরার দ্বিতীয় নাম্বার আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে।
(গ) ‘সূরা আম্মা ইয়াতাসাআলূন’, বাক্যটি সূরার প্রথম আয়াত।
(ঘ) ‘সূরা আল-মুՙসিরাত’, শব্দটি সূরার ১৪ নাম্বার আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।
(ঙ) ‘সূরা তাসাউল’, শব্দটি সূরার প্রথম আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। (রুহুল মায়ানী, আলূসী: ১৫/২০১, তাফসীর মাওজূয়ী, মোস্তফা মুসলিম: ১০/১) ।

আলোচ্যবিষয়: পুনরুত্থান দিবস ও তা সংগঠিত হওয়ার প্রমাণ।

সূরার ফযিলত:
(ক) কিয়ামুল লাইলে ‘সূরা আন নাবা’ তেলাওয়াত করা, রাসূলুল্লাহ (সা.) কিয়ামুল লাইলে এ সূরা পাঠ করতেন (মাওসূয়াত ফাযায়িল সূয়ার, তারহুনী: ২./১১০) । আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন:
“أنَّ النبي – صلَّى الله عليه وسلم – كان يقرأ النَّظائرَ السُورتين في رَكْعةٍ، (الرحمن، والنجم) في ركعة، و (اقتربت، والحاقة) في ركعة، و (الطور، والذاريات) في ركعة، و (إذا وقَعَت، ونون) في ركعة، و (سأل سائل، والنازعات) في ركعة، و (وَيْلٌ للمطففين، وعبس) في ركعة، و (المدَّثر، والمزمِّل) في ركعة، و (هل أتى، ولا أقسمُ بيوم القيامة) في ركعة، و (عمَ يتساءلون، والمرسلات) في ركعة، و (الدخان، وإذا الشمسُ كورت) في ركعة” (سنن أبو داود: ১৩৯৬).
অর্থাৎ: “রাসূলুল্লাহ (সা.) এক রাকয়াতে সাদৃশ্যপূর্ণ দুইটি সূরা তেলাওয়াত করতেন। প্রথম রাকয়াতে সূরা রহমান ও নায্ম, পরের রাকয়াতে সূরা ক্বমার ও হাক্ক¦াহ, পরের রাকয়াতে সূরা ত‚র ও যারিয়াাত, পরের রাকয়াতে সূরা ওয়াক্বিয়া ও নূন, পরের রাকয়াতে সূরা মায়ারিজ ও নাাযিয়াাত, পরের রাকয়াতে সূরা মুতাফফিফীন ও আবাসা, পরের রাকায়াতে সূরা মুদ্দাস্সির ও মুয্যাম্মিল, পরের রাকয়াতে দাহ্র ও কিয়ামাহ, পরের রাকায়াতে সূরা নাবা ও মুরসালাত এবং শেষের রাকাতে সূরা দুখান ও তকভীর” (সুনান আবি দাউদ: ১৩৯৬, হাদীসটি সহীহ) ।
(খ) অত্র সূরাটি মুফাস্সালাত এর অন্তভ‚ক্ত, আর মুফাস্সালাত সূরাগুলোকে কোরআনের অন্তর বলা হয়। যেমন: ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন:
(إِنَّ لِكُلِّ شَيْءٍ سَنَامًا، وَإِنَّ سَنَامَ الْقُرْآنِ سُورَةُ الْبَقَرَةِ، وَإِنَّ لِكُلِّ شَيْءٍ لُبَابًا، وَإِنَّ لُبَابَ الْقُرْآنِ الْمُفَصَّلُ) [سنن الدارمي: ৩৪২০].
অর্থাৎ: “প্রত্যেক জিনিসের মস্তিষ্ক আছে, কোরআনের মস্তিষ্ক হলো: সূরা বাকারা; এবং প্রত্যেক জিনিসের অন্তর আছে, আর কোরআনের অন্তর হলো: মুফাস্সাল সূরাগুলো”।
(সুনানে দারিমী, ৩৪২০) ।
আরো একটি হাদীসে এসেছে, যেখানে বলা হয়েছে মুফাস্সালাত সূরাগুলো ইতিপূর্বে কোন নবী-রাসূলকে প্রদান করা হয়নি। যেমন: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
(لَقَدْ أُعْطِيتُ السَّبْعَ الطِّوَالَ مَكَانَ التَّوْرَاةَ، وَالْمَثَانِي مَكَانَ الْإِنْجِيلِ، وَفُضِّلْتُ بِالْمُفَصَّلِ) [مسند الشامين: ২৭৩৪].
অর্থাৎ: “আমাকে তাওরাত এর স্থলাভিষিক্ত সাতটি লম্বা সূরা, ইনজীল এর স্থলাভিষিক্ত মাসানী সূরাগুলো দেওয়া হয়েছে এবং আমাকে অতিরিক্ত প্রদান করা হয়েছে মুফাস্সাল সূরাগুলো, যা পূর্বের কোন নবী-রাসূলকে দেওয়া হয়নি”। (মুসনাদে শামী, ২৭৩৪) ।

হাদীসে মুফাস্সালাত সূরা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: সূরা ক্বফ থেকে সূরা নাস পর্যন্ত সূরাগুলো।

মুসহাফে সূরাটির অবস্থান: ৭৮তম সূরা।

অবতীর্ণের দৃষ্টিতে সূরাটির অবস্থান: ৭৯তম সূরা, যা ‘সূরা মায়ারেয’ এর পরে এবং ‘সূরা নাযিয়াত’ এর পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে।

অবতীর্ণের স্থান: সকল তাফসীরকারক একমত যে, সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে, সতরাং তা সূরা মাক্কিয়্যাহ। (বিতাকাত আল-তারীফ, ২৭৪) ।

আয়াত সংখ্যা: ৪০টি।

অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট: এ সূরাটির একটি অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট পাওয়া যায়।

সূরা নাযিয়াত এর (৩৪-৪৬) আয়াতের তাফসীর, আলোচ্য বিষয়: কিয়ামতের দিন মানুষের দুই দলে বিভক্তি।

By দৈনিক তাফসীর No Comments

সূরা নাযিয়াত এর (৪৩-৪৬) আয়াত অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট:
আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বার বার কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে আল্লাহ তায়ালা অত্র সূরার শেষের চার আয়াত অবতীর্ণ করে জানিয়ে দেন যে কিয়ামত কখন হবে সে সম্পর্কে কেবল আল্লাহ তায়ালাই জানেন।
ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন: মক্কার মুশরিকরা রাসূলুল্লাহকে উপহাস পূর্বক জিজ্ঞাসা করতো তুমি শুধু কিয়ামত কিয়ামত করো, তাহলে বলো: কখন তোমার কিয়ামত সংগঠিত হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা অত্র সূরার (৪৩-৪৬) আয়াত অবতীর্ণ করেছেন।
ইবনু জারীর আল-তবারী (র.) তার তাফসীর গ্রন্থে তারিক ইবনু শিহাব (র.) এর সনদে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) কিয়মতের কথা বেশী বেশী স্মরণ করার কারণে আল্লাহ তায়ালা (৪৩-৪৪) নাম্বার আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। (লুবাব আল-নুক‚ল, সুয়ূতী: ৩৫২-৩৫৩) ।

সূরা নাযিয়াত এর (৩৪-৪৬) আয়াতের শিক্ষা:
১। অত্র সূরার (৩৪-৩৬) আয়াতে হাশরের ময়দানের দুইটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে:
(ক) মানুষের সামনে যখন তাদের দুনিয়ার কৃতকর্ম পেশ করা হবে, তখন তারা তাদের কৃতকর্মগুলোকে চিনতে ও বুঝতে পারবে।
(খ) কাফির ও ঈমানদার সকলের সামনে জাহান্নামকে উপস্থাপন করা হবে। কাফিররা জাহান্নামের মধ্যে যত ধরণের শাস্তি আছে দেখতে পাবে এবং মুমিনরা জাহান্নামকে দেখে তাদেরকে যে নেয়ামত প্রদান করা হয়েছে তার মূল্য বুঝতে পারবে। (তাফসীর আল মুনীর: ৩০/৫৪) ।
২। অত্র সূরার (৩৭-৩৯) আয়াতে হাশরের ময়দানে বিচারের পর জাহান্নামী হওয়ার দুইটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে:
(ক) আল্লাহর বিধানের সীমালঙ্গন করা।
(খ) দুনিয়াকে আখেরাতের উপর প্রাধান্য দিয়ে দুনিয়া ভিত্তিক জীবনযাপন করা।
৩। অত্র সূরার (৪০-৪২) আয়াতে হাশরের ময়দানে বিচারের পর জান্নাতী হওয়ার দুইটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে:
(ক) কিয়ামতের দিনে আল্লাহর সামনে দাড়ানোকে ভয় করা।
(খ) কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজের আত্মাকে পুতপবিত্র রাখা।
৪। অত্র সূরার (৪৩-৪৬) আয়াতে কিয়ামত সংশ্লিষ্ট চারটি বিষয়ে কথা বলা হয়েছে:
(ক) কিয়ামতের প্রস্তুতির জন্য তা কখন সংগঠিত হবে তা জানার দরকার হয় না।
(খ) কিয়ামত কখন সংগঠিত হবে, তা কেবল আল্লাহ তায়ালা জানেন।
(গ) যারা কিয়ামতের দিনকে ভয় পাবে কেবল তাদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়া।
(ঘ) মানুষ যখন কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থা প্রত্যক্ষ করবে, তখন তাদের কাছে মনে হবে দুনিয়াতে তারা এক সকাল কিংবা এক সন্ধ্যা অবস্থান করেছিল।
৫। অত্র সূরার ৪৬নং আয়াতের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আখেরাতের জীবনের তুলনায় দুনিয়ার জীবন খুবই স্বল্প সময়ের। এ সম্পর্কে সূরা আহক্বাফ এর ৩৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে:
فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ أُولُو الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ وَلَا تَسْتَعْجِلْ لَهُمْ كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَ مَا يُوعَدُونَ لَمْ يَلْبَثُوا إِلَّا سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ بَلَاغٌ فَهَلْ يُهْلَكُ إِلَّا الْقَوْمُ الْفَاسِقُونَ (৩৫) [سورة الأحقاف: ৩৫].
অর্থাৎ: “অতঃপর (হে নবী!) তুমি ধৈর্য ধারণ করো যেমন করে ধৈর্য ধারণ করেছিলো আগের যুগের রাসূলগণ, তাদের ব্যাপারে তুমি তাড়াহুড়ো করো না; যেদিন সত্যিই তারা সেই আযাব নিজেদের সামনে দেখতে পাবে, যার ওয়াদা তাদের কাছে করা হয়েছিলো, তখন তাদের অবস্থা হবে এমন, যেন তারা দুনিয়ায় দিনের সামান্য কিছু মুহূর্ত অতিবাহিত করে এসেছে; মূলত এটা একটি ঘোষণামাত্র, এ ঘোষণা যারা প্রত্যাখ্যান করেছে, কেবল তারাই সেদিন ধ্বংস হবে” (সূরা আহক্বাফ: ৩৫) ।
৬। অত্র সূরার ৩৫নং আয়াতের অনুরুপ একটি আয়াত সূরা ফজর এর ২৩নং আয়াত এবং সূরা মুযাদালাহ এর ৬নং আয়াতে এসেছে এবং (৪২-৪৪) নাম্বার আয়াতের অনুরুপ আয়াত সূরা আরাফ এর ১৮৭ এবং সূরা লোক্বমান এর ৩৪নং আয়াতে এসেছে।

আয়াতাবলীর আমল:
(ক) কিয়ামতের ভয়াবহতার কথা মনে করে আখেরাত ভিত্তিক জীবনযাপন করা।
(খ) ইসলামের সীমরেখা অতিক্রম না করা।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পরিচয়:

By মুসলিম হিসেবে যা জানতেই হবে No Comments

তিনি হলেন: মোহাম্মদ ইবনু আব্দিল্লাহ ইবনু আব্দিল মুত্তালিব ইবনু হাশিম। আর হাশিম হলেন কোরাইশ বংশের এবং কোরাইশ হলো আরবের এবং আরব হলো ইসমাঈল ইবনু ইব্রাহীম (আ.) এর বংশের।

তিনি ৬৩ বছর জীবিত ছিলেন। নবুয়াত প্রাপ্তির পূর্বে ৪০ বছর এবং নবুয়াত প্রাপ্তির পর ২৩ বছর। তিনি মক্কার অধিবাসী ছিলেন।

আল্লাহ তায়ালা তাকে শিরক থেকে ভীতিপ্রদর্শন এবং তাওহীদ বা একত্ববাদের দিকে আহবান করার জন্য বিশ্ববাসীর কাছে  প্রেরণ করেছেন। তিনি সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তার পরে আর কোন নবী ও রাসূল আসবেন না।

error: Content is protected !!