﴿وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُمْ مِنْ كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُصَدِّقٌ لِمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنْصُرُنَّهُ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَى ذَلِكُمْ إِصْرِي قَالُوا أَقْرَرْنَا قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُمْ مِنَ الشَّاهِدِينَ (81) فَمَنْ تَوَلَّى بَعْدَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ (82) أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ (83)﴾ [سورة آل عمران: 81-83]
আয়াতের আলোচ্যবিষয়: নবী-রাসুলদের পারস্পরিক সম্পর্ক।
আয়াতের সরল অনুবাদ:
৮১। আর স্মরণ কর, যখন আল্লাহ নবীদের থেকে এ মর্মে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন যে, আমি তোমাদেরকে কিতাব এবং হিকমাত দিয়েছি, অতঃপর তোমাদের সাথে যা আছে তার সত্যায়নের জন্য তোমাদের কাছে একজন সত্যায়নকারী রাসূল আসবে। তখন তোমরা অবশ্যই তার প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে। তিনি বললেন: তোমরা কি আমার অঙ্গীকার গ্রহণ করলে এবং মেনে নিলে? তারা বললো: মেনে নিলাম, তিনি বললেন: তবে তোমরা সাক্ষী থাকো এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম।
৮২। সুতরাং অঙ্গীকার গ্রহণ এর পরে যারা ফিরে যাবে, তারাই হবে ফাসিক।
৮৩। আল্লাহর নির্বাচিত ধর্মের পরিবর্তে তারা কি অন্য কোন ধর্ম চায়? অথচ আসমান-যমীনের সবকিছু ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় তাঁরই জন্য আত্মসমার্পণ করে, এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাবে।
আয়াতাবলীর ভাবার্থ:
রাসূলুল্লাহকে (সা.) সম্বোধন করে বলা হয়েছে: আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসূলদের থেকে যে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন, তা যেন তিনি তার উম্মত ও নাজরান থেকে আগত খৃষ্টানদেরকে জানিয়ে দেন। অঙ্গীকারের রুপরেখা হলো: আল্লাহ তায়ালা যখনই কাউকে নবী হিসেবে নির্বাচন করতেন, তখন প্রথমেই তার থেকে এ মর্মে ওয়াদা গ্রহণ করতেন যে, তার জীবদ্দশায় অথবা নবুয়াতকালে মোহাম্মদের (সা.) আগমণ ঘটলে, তার নিজস্ব দাওয়াতি কাজ বাদ দিয়ে মোহাম্মদের প্রতি ঈমান গ্রহণ করবে এবং তাকে দাওয়াতী কাজে সাহায্য করবে। আর তাদের সময়ে মোহাম্মদের (সা.) আগমণ না হলে, তাদের উম্মত যেন তার প্রতি ঈমান আনে এবং তাকে সাহায্য করে মর্মে ওসিয়ত করে যাবে। এভাবে আদম (আ.) হতে আরম্ভ করে ঈসা (আ.) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূল থেকে আল্লাহ তায়ালা অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন এবং তারা সকলেই এ প্রতিশ্রæতিতে আবদ্ধ হয়েছে। এ ওয়াদার উপর আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সাক্ষী রেখেছেন এবং তিনি নিজেও সাক্ষী রয়েছেন।
সুতরাং যারা এ অঙ্গীকার গ্রহণ করার পর তা অস্বীকার করে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তারা আল্লাহ প্রদত্ব ওয়াদা এবং তাদের নবীর ওসিয়ত ভঙ্গ করার কারণে ফাসিক হিসেবে পরিগণিত হবে। ইহুদীখৃষ্টানরা এ অঙ্গীকারকে ভঙ্গ করে আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যতায় পতিত হয়েছে, কারণ তারা রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং কোরআনকে অস্বীকার করেছে।
অতঃপর ইহুদীখৃষ্টানদেরকে তিরস্কারপূর্বক বলা হয়েছে, তারা কি আল্লাহ তায়ালার নির্বাচিত ধর্ম ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন ধর্ম তালাশ করছে? অথচ আসমান-যমীনের সবকিছুই ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণ করছে এবং সবকিছুই বিচারের কাঠগড়ায় দাড়ানোর জন্যে তাঁরই দিকে ফিরে যাচ্ছে। (আইসার আল-তাফসীর: ১/৩৪০-৩৪১, আল-তাফসীর আল-মুয়াস্সার: ১/৬০, আল-মোন্তাখাব: ১/৯৯) ।
আয়াতাবলীর বিরল শব্দের ব্যাখ্যা:
﴿وَإِذْ﴾ ‘এবং যখন’, আয়াতাংশে কোন সময়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে? এ বিষয়ে তাফসীকারকদের থেকে দুইটি মত পাওয়া যায়:
(ক) অধিকাংশ তাফসীরকারকদের মতে, যখন কাউকে নবী হিসেবে প্রেরণ করা হতো, তখন প্রথমেই তার থেকে এ মর্মে অঙ্গীকার গ্রহণ করা হতো যে, তার জীবদ্দশায় মোহাম্মদের (সা.) আগমণ ঘটলে সে নিজের দাওয়াতী মিশন বন্ধ করে দিয়ে তার প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে দাওয়াতি কাজে সহযোগিতা করবে। আর তার সময়ে মোহাম্মদের (সা.) আগমণ না হলে তার উম্মতকে তার প্রতি ঈমান ও সহযোগিতার জন্য অসিয়ত করে যাবে। এভাবে আদম (আ.) থেকে শুরু করে ঈসা (আ.) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূল থেকে বিভিন্ন সময়ে ওয়াদা গ্রহণ করেছেন। (তাফসীর ইবনু কাসীর: ২/৬৭) ।
(খ) আয়াতের সাবিক-লাহিক বা বাচনভঙ্গি থেকে বুঝা যায়, আল্লাহ তায়ালা রুহের জগতে সকল নবী-রাসূল থেকে উল্লেখিত অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন। যেমন:
প্রথমত: কোরআনের যত যায়গাতে ‘ইয’ বা যখন শব্দটি বলা হয়েছে, সব জায়গাতেই নির্দিষ্ট সময়ে সংগঠিত হওয়া ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: আয়াতের প্রতিটি অংশে বহুবচণের শব্দ ব্যবহার করে সম্বোধন করা হয়েছে।
তৃতীয়ত: আল্লাহ তায়ালা যখন সকল নবী থেকে স্বীকৃতি গ্রহণ করেছিলেন, তখন সবাই সমস্বরে স্বীকৃতি প্রদান করেছিলেন। (আল্লাহই ভালো জানেন) ।
﴿مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ﴾ ‘নবীদের থেকে অঙ্গীকার’, নবীদের থেকে কোন বিষয়ের উপর অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়েছিল? এ বিষয়ে তিনটি কথা পাওয়া যায়:
(ক) একজন নবীর জীবদ্দশায় কোন নবীর আগমণ ঘটলে সে নিজের দাওয়াতী মিশন বন্ধ করে দিয়ে পরবর্তী নবীর প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে দাওয়াতি কাজে সহযোগিতা করবে, যা ৮১নং আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায়।
(খ) তাউস এবং হাসান বসরী (রা.) বলেন: সকল নবী একে অপরের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে এবং পরস্পরকে সত্যায়ন করবে। (তাফসীর আল-কুরতুবী: ৪/১২৪) ।
(গ) আলী (রা.) বলেন: একজন নবীর জীবদ্দশায় মোহাম্মদের (সা.) আগমণ ঘটলে সে নিজের দাওয়াতী মিশন বন্ধ করে দিয়ে তার প্রতি ঈমান আনবে এবং দাওয়াতি কাজে সহযোগিতা করবে। (তাফসীর ইবনু কাসীর: ২/৬৭) ।
ইবনু কাসীর (র.) বলেন: উল্লেখিত তিনটি মতের মধ্যে বাহ্যিক দৃষ্টিতে বিরোধ পরিলক্ষিত হলেও মূলত তাদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই, বরং একটি মত আরেকটি মতকে আরো শক্তিশালী করে। (তাফসীর ইবনু কাসীর: ২/৬৮) ।
﴿رَسُولٌ﴾ ‘রাসূল’, আয়াতাংশ দ্বারা উদ্দেশ্য কি? এ ব্যাপারে তাফসীরকারকদের থেকে দুইটি মত পাওয়া যায়:
(ক) আয়াতে ‘রাসূল’ দ্বারা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত যে কোন রাসূলকে বুঝানো হয়েছে, নির্দিষ্টভাবে কাউকে বুঝানো হয়নি। এ ক্ষেত্রে আয়াতের অর্থ হবে: আল্লাহ তায়ালা সকল নবী-রাসূল থেকে এ মর্মে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন যে, তাদের জীবদ্দশায় কোন রাসূল প্রেরিত হলে, তারা তার প্রতি ঈমান আনবে ও সহযোগিতা করবে। আর তাদের সময়ে আগমণ না হলে, তাদের উম্মতকে তার প্রতি ঈমান ও সহযোগিতার অসিয়ত করে যাবে।
(খ) আয়াতে ‘রাসূল’ দ্বারা মোহাম্মদকে (সা.) বুঝানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আয়াতের অর্থ হবে: আল্লাহ তায়ালা সকল নবী-রাসূল থেকে এ মর্মে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন যে, তাদের জীবদ্দশায় মোহাম্মদ (সা.) প্রেরিত হলে, তারা তার প্রতি ঈমান আনবে এবং সহযোগিতা করবে। আর তাদের সময়ে তার আগমণ না হলে, তাদের উম্মতকে তার প্রতি ঈমান ও সহযোগিতার অসিয়ত করে যাবে। (তাফসীর ইবনু কাসীর: ২/৬৭) ।
﴿إِصْرِي﴾ ‘আমার অঙ্গীকার’, আয়াতাংশে ‘ইসরি’ আরবী শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ হলো: ভারী বা কঠিন। এটাকে অঙ্গীকার বলা হয়েছে. কারণ এটি সেই বিষয়কে বাধা দেয় যার জন্য তা নির্ধারিত হয়েছে, এবং এটি এমন একটি ভারী দায়িত্ব বা অঙ্গীকার সৃষ্টি করে যা কঠিন এবং বাধ্যতামূলক। (গরীব আল-কোরআন, ইবনু কুতাইবা: ১/৯৬) ।
উল্লেখিত আয়াতাবলীর সাথে পূর্বের আয়াতাবলীর সম্পর্ক:
অত্র সূরার (১-৮০) নাম্বার আয়াতে ইহুদী-খৃষ্টান কর্তৃক আল্লাহর বাণী বিকৃতি করা এবং তাদের কিতাবে বর্ণিত মোহাম্মদ রাসূলুল্লাহর (সা.) গুণাবলী পরিবর্তন করার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে খেয়ানত করার কথা বণিত হয়েছে, যার মাধ্যমে উদ্দেশ্য ছিল তাদেরকে রাসূলুল্লাহর (সা.) রিসালাতের প্রতি বিশ্বাসী বানানো এবং তার নবুয়াত প্রতিষ্ঠিত করা। আর অত্র আয়াতাবলীতে সেই উদ্দেশ্যকে সুস্পষ্ট দলীল পেশ করার মাধ্যমে আরো সুদৃঢ় করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা পূর্ববর্তী সকল নবী-রাসূল থেকে এ মর্মে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন যে, তাদের জীবদ্দশায় মোহাম্মদ (সা.) প্রেরিত হলে, তারা তার প্রতি ঈমান আনবে এবং সহযোগিতা করবে। আর তাদের সময়ে তার আগমণ না হলে, তাদের উম্মতকে তার প্রতি ঈমান ও সহযোগিতার অসিয়ত করে যাবে। তাহলে, এ যদি হয় নবীদের চুক্তি, তবে তাদের অনুসারীদের উচিৎ সকল নবী-রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং তাদের কাছে যা আছে, তা সত্যায়ন করা; কারণ তাদের সকলের ধর্ম এক ইসলাম। (তাফসীর আল-মুনীর, ওয়াহাবা জুহাইলী: ৩/২৭৮-২৭৯) ।
আয়াতাবলীর শিক্ষা:
১। ৮১ নাম্বার আয়াত থেকে পরিলক্ষিত হয় যে,
(ক) আদম (আ.) থেকে শুরু করে মোহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূল এবং তাদের উম্মতরা পরস্পরের প্রতি ঈমান আনবে এবং সত্যায়ন করবে; কারণ তারা একই ধর্ম ইসলামের অনুসারী, পার্থক্য শুধু সময়, অবস্থান ও প্রেক্ষাপটে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“الْأَنْبِيَاءُ إِخْوَةٌ مِنْ عَلَّاتٍ، وَأُمَّهَاتُهُمْ شَتَّى، وَدِينُهُمْ وَاحِدٌ، فَلَيْسَ بَيْنَنَا نَبِيٌّ” (صحيح مسلم: ২৩৬৫).
অর্থাৎ: ভিন্ন ভিন্ন মায়ের সন্তান হওয়া সত্বেও সকল নবী-রাসূলগণ ভাইয়ের মত এবং তাদের ধর্ম এক। আমার এবং ঈসার (আ.) মধ্যে কোন নবী নেই। (সহীহ মুসলিম: ২৩৬৫) । সুতরাং ইহুদী-খৃষ্টানদের উচিৎ মোহাম্মদ (সা.) এবং কোরআনের প্রতি ঈমান আনার মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিমদেরকে স্বীকৃতি প্রদান করা। ইসলাম আমাদেরকে সকল নবী-রাসূল ও আসমানী কিতাবকে স্বীকৃতি প্রদান করতে শিক্ষা দেয়। যেমন: সূরা বাক্বারার একটি আয়াতে এসেছে:
﴿آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ﴾ [سورة البقرة: ২৮৫].
অর্থাৎ: “রাসূলুল্লাহ (সা.) সে বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, যা তার রবের পক্ষ থেকে তার উপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুমিনরাও একই বিষয়ে ঈমান এনেছে। তারা সকলে ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কেতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলদের প্রতি। আমরা তাঁর প্রেরিত নবী-রাসূলদের মধ্যে কোন ধরণের পার্থক্য করি না। আর মুমিনরা বলে: আমরা আল্লাহর নির্দেশ শুনেছি এবং মেনে নিয়েছি। হে আমাদের রব! আমরা আপনার কাছে ক্ষমা চাই এবং আমদেরকে একদিন আপনার কাছেই ফিরে যেতে হবে” (সূরাতু আল-বাক্বারা: ২৮৫) ।
(খ) উল্লেখিত অঙ্গীকারকে সুদৃঢ় করার জন্য প্রথমত আল্লাহ তায়ালা সকল নবী-রাসূল থেকে স্বীকৃতি গ্রহণ করেছেন এবং দ্বিতীয়ত প্রদত্ত স্বীকৃতির উপর তাদেরকে সাক্ষী রাখার পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালা নিজেও সাক্ষী রয়েছেন। (মাফাতিহ আল-গাইব, রাযী: ৮/২৭৯) ।
২। ৮২নং আয়াতে নবী-রাসূলদের সাথে সংগঠিত চুক্তিকে তৃতীয় বারের মতো সুদৃঢ় করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে যারা উক্ত অঙ্গীকারকে ভঙ্গ করবে তারা দীনের গন্ডি থেকে বেড়িয়ে গিয়ে কাফের হয়ে যাবে। (মাফাতিহ আল-গাইব, রাযী: ৮/২৭৯) ।
৩। ৮৩নং আয়াত থেকে দুইটি বিষয় পরিলক্ষিত হয়:
(ক) অত্র আয়াতে চতুর্থ বারের মতো নবী-রাসূলদের সাথে সংগঠিত অঙ্গীকারকে সুদৃঢ় করা হয়েছে। যেখানে অঙ্গীকার ভঙ্গকারীদেরকে তিরস্কারপূর্বক বলা হয়েছে, তারা কি আল্লাহর দীনকে বাদ দিয়ে অন্য কোন দীনকে তালাশ করছে, অথচ আসমান-যমীনের সবকিছু ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় তাঁর কাছে আত্মসমার্পণ করেছে। (আইসার আল-তাফাসীর, জাযায়িরী: ১/৩৪০) ।
(খ) আল্লাহ তায়ালার প্রতিটি সৃষ্টি তাঁর কাছে আত্মসমার্পণ করে থাকে। মানব ও জীন জাতি ছাড়া বাকী সকল সৃষ্টি জগত শতভাগ তাঁর কাছে আত্মসমার্পণ করে। আর মানব ও জীন জাতির মধ্যে যারা আল্লাহর অবাধ্য বা কাফির, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে বিপদ-আপদ ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে এক মুহুর্তের জন্য হলেও আত্মসমার্পণ করতে বাধ্য করে থাকেন। যেমন: মহাসমূদ্রে জাহাজ যখন ঝড়ের কবলে পড়ে এবং মহাশুন্যে বিমান যখন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ইত্যাদি। (আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন)।
৫। (৮১-৮৩) নাম্বার আয়াতাবলীতে তিনটি ভঙ্গিতে মোহাম্মদ (সা.) এবং কোরআনকে অস্বীকারকারী ইহুদী-খৃষ্টানদের উচিৎ জবাব দেওয়া হয়েছে:
(ক) তারা রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং কোরআনের সাথে যা করছে তা তাদের পূর্বপুরুষ নবী-রাসূলদের সাথে আল্লাহ প্রদত্ত চুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক।
(খ) যারা উক্ত অঙ্গীকারকে লঙ্ঘন করবে, তারা কাফির।
(গ) তাদের এ চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে তিরস্কার করা হয়েছে। (আল্লাহই ভালো জানেন) ।
আয়াতাবলীর আমল:
১। সকল নবী-রাসূলদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং তাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। বিশেষ করে ইহুদী-খৃষ্টানদের উচিৎ মোহাম্মদ (সা.) সহ সকল নবী-রাসূলদেরকে সম্মান দেখানো এবং তাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।
২। ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন ধর্মকে তালাশ না করা।