সূরা আলে ইমরান এর পরিচয়:
সূরার নাম: বিভিন্ন তাফসীরগ্রন্থ থেকে অত্র সূরার অনেকগুলো নাম পাওয়া যায়:
(ক) আলে ইমরান (তাওকীফি নাম), সূরাটি অত্র নামেই সবার কাছে পরিচিত। এ নামটি বিভিন্ন সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এ সূরায় ইমরান (আ.) এর বংশধর সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, তাই তার নাম আলে ইমরান রাখা হয়েছে।
(খ) জাহরা (তাওকীফি নাম) এ নামটিও সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
(গ) আল-কান্জ (ইজতিহাদী নাম), আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) এ নামে নামকরণ করেছেন।
(ঘ) আল-তাইবাহ, তাওরাত গ্রন্থে এ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
(ঙ) সূরা আল-আমান, সূরা মু’ইনাহ, সূরা মুজাদালাহ এবং সূরা আল-ইস্তেগফার, ইমাম আবু হাইয়্যান আল-আন্দলুসী এবং ইমাম আলূসী (রহ.) তাদের তাফসীর গ্রন্থে উক্ত নামগুলো উল্লেখ করেছেন। (তাফসীর মাওজূয়ী, মোস্তফা মুসলিম: ২/৪০৩-৪০৪) ।
সূরার আলোচ্য বিষয়: আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস ও তার প্রমাণ।
সূরার ফযিলত: এ সূরার অনেকগুলো ফযিলত রয়েছে, সহীহ হাদীসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ ফযিলতগুলো হলো:
(ক) সূরা আলে ইমরান এবং সূরা বাক্বারা কিয়ামতের দিন মেঘ হয়ে পাঠককে ছায়া প্রদান করবে, আবু উমামা আল বাহিলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِأَصْحَابِهِ، اقْرَءُوا الزَّهْرَاوَيْنِ الْبَقَرَةَ، وَسُورَةَ آلِ عِمْرَانَ، فَإِنَّهُمَا تَأْتِيَانِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَأَنَّهُمَا غَمَامَتَانِ، أَوْ كَأَنَّهُمَا غَيَايَتَانِ، أَوْ كَأَنَّهُمَا فِرْقَانِ مِنْ طَيْرٍ صَوَافَّ، تُحَاجَّانِ عَنْ أَصْحَابِهِمَا، اقْرَءُوا سُورَةَ الْبَقَرَةِ، فَإِنَّ أَخْذَهَا بَرَكَةٌ، وَتَرْكَهَا حَسْرَةٌ، وَلَا تَسْتَطِيعُهَا الْبَطَلَةُ” (صحيح مسلم: ১৯১০).
অর্থাৎ: “তোমরা কোরআন তেলাওয়াত করো, কারণ সে তার সাথীর নিকট কিয়ামতের দিন শাফায়াতকারী হিসেবে উপস্থি হবে। তোমরা সূরা বাক্বারা ও সূরা আলে ইমরান তেলাওয়াত করো, কারণ তারা কিয়ামতের দিন এমনভাবে আসবে যেন তা দুই খন্ড মেঘ, অথবা দুইটি ছায়াদানকারী, অথবা দুই ঝাঁক উড়ান্ত পাখি, যা পাঠকারীর পক্ষ হয়ে কথা বলবে। আর তোমরা সূরা বাক্বারা তেলাওয়াত করো, কারণ এ সূরাটিকে গ্রহণ করা বরকতের কাজ এবং পরিত্যাগ করা পরিতাপের কাজ। আর বাতিলের অনুসারীগণ এর বিরোধিতা করতে পারে না” (সহীহ মুসলিম: ১৯১০) ।
(খ) সূরা আলে ইমরান নিয়মিত পাঠ করলে পাঠকারীর অভাব-অনটন থাকবে না, সুনান আল-দারিমীতে একটি হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন:
“مَنْ قَرَأَ آلَ عِمْرَانَ، فَهُوَ غَنِيٌّ وَالنِّسَاءُ مُحَبِّرَةٌ” (سنن الدارمي: ৩৪৩৮).
অর্থাৎ: “যে ব্যক্তি সূরা আলে ইমরান তেলাওয়াত করে, সে ধনী; এবং সূরা নিসা সৌন্দর্যবর্ধনকারী” (সুনান আল-দারিমী: ৩৪৩৮) ।
মোহাক্কেক হাসান সুলাইম আসাদ দারানী বলেন: হাদীসের সনদ ‘জাইয়্যেদ’ বা ভালো।
(গ) অত্র সূরাটি সাবউ আল-তিওয়াল বা লম্বা সাত সূরার অন্তভ‚ক্ত, আর যে ব্যক্তি এ সাতটি সূরা শিখবে, সে আলেম। আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“مَنْ أَخَذَ السَّبْعَ الأُوَلَ مِنَ الْقُرْآنِ، فَهُوَ حَبْرٌ” (مسند أحمد: ২৪৫৭৫).
অর্থাৎ: “যে ব্যক্তি কোরআনের প্রথম সাতটি সূরা শিখবে, সে আলেম হিসেবে গণ্য হবে” (মুসনাদে আহমাদ: ২৪৫৭৫) । মোহাক্কিক শোয়াইব আরনাউত হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।
উল্লেখ্য যে, কোরআনের লম্বা সাত সূরা হলো: সূরা বাক্বারা, সূরা আলে ইমরান, সূরা নিসা, সূরা মায়িদাহ, সূরা আনয়াম, সূরা আরাফ এবং সূরা তাওবাহ।
(ঘ) তাহাজ্জুদ সালাতে অত্র সূরা তেলাওয়াত করা, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদের সাত রাকায়াতে সাতটি লম্বা সূরা তেলাওয়াত করতেন। হুজাইফা (রা.) বলেন:
“قُمْتُ إِلَى جَنْبِ رَسُولِ اللهِ -صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- ذَاتَ لَيْلَةٍ، فَقَرَأَ السَّبْعَ الطِّوَلَ فِي سَبْعِ رَكَعَاتٍ” (مسند أحمد: ২৩৪১১).
অর্থাৎ: “আমি কোন এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পাশে সালাতে দারালাম, অতঃপর তিনি সাত রাকায়াতে সাতটি লম্বা সূরা তেলাওয়াত করলেন” (মুসনাদে আহমাদ: ২৩৪১১) । মোহাক্কিক শোয়াইব আরনাউত বলেন: সনদের একজন রাভী হুজাইফার চাচা, তিনি অপরিচিত হওয়ার কারণে হাদীসটি ‘হালকা যয়ীফ’ হয়েছে।
মুসহাফে সূরাটির অবস্থান: তৃতীয় সূরা।
অবতীর্ণ হওয়ার দৃষ্টিতে সূরাটির অবস্থান: ৮৭তম সূরা, সূরা বাক্বারা এর পরে এবং সূরা আনফাল এর পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে।
অবতীর্ণের স্থান: সকল মোফাসসিরের মতে, মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে, সূরা মাদানিয়্যাহ।
আয়াত সংখ্যা: ২০০টি।
অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট: অত্র সূরায় মোট একচল্লিশটি অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট রয়েছে।