Skip to main content

সূরা আন-নাবা এর (১-১৬) আয়াতের তাফসীর, আলোচ্য বিষয়: পুনরুত্থান দিবস এবং তা সংগঠিত হওয়ার প্রমাণ।

By January 11, 2024March 20th, 2024দৈনিক তাফসীর1 min read

عَمَّ يَتَسَاءَلُونَ (1) عَنِ النَّبَإِ الْعَظِيمِ (2) الَّذِي هُمْ فِيهِ مُخْتَلِفُونَ (3) كَلَّا سَيَعْلَمُونَ (4) ثُمَّ كَلَّا سَيَعْلَمُونَ (5) أَلَمْ نَجْعَلِ الْأَرْضَ مِهَادًا (6) وَالْجِبَالَ أَوْتَادًا (7) وَخَلَقْنَاكُمْ أَزْوَاجًا (8) وَجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا (9) وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِبَاسًا (10) وَجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا (11) وَبَنَيْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعًا شِدَادًا (12) وَجَعَلْنَا سِرَاجًا وَهَّاجًا (13) وَأَنْزَلْنَا مِنَ الْمُعْصِرَاتِ مَاءً ثَجَّاجًا (14) لِنُخْرِجَ بِهِ حَبًّا وَنَبَاتًا (15) وَجَنَّاتٍ أَلْفَافًا (16) [سورة النبأ: 1-16]

 

আয়াতের আলোচ্য বিষয়: পুনরুত্থান দিবস এবং তা সংগঠিত হওয়ার প্রমাণ।

আয়াতের সরল অনুবাদ:
(১) কোন বিষয় সম্পর্কে তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করছে?
(২,৩) মহাসংবাদটি সম্পর্কে, যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে।
(৪) কখনও নয়, তারা অচিরেই জানতে পারবে।
(৫) আবারও বলি, কখনও নয়, তারা অচিরেই জানতে পারবে।
(৬,৭) আমি কি যমীনকে শয্যা এবং পর্বতসমূহকে পেরেক বানাইনি?
(৮) আর আমি তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি।
(৯) আর আমি তোমাদের নিদ্রাকে বিশ্রাম বানিয়েছি।
(১০) আর রাত্রকে বানিয়েছি আবরণ।
(১১) আর দিনকে বানিয়েছি জীবিকার্জনের সময়।
(১২) আর আমি তোমাদের উপর বানিয়েছি সাতটি সুদৃঢ় আকাশ।
(১৩) আর আমি সৃষ্টি করেছি উজ্জ্বল একটি প্রদীপ।
(১৪,১৫) আর আমি মেঘমালা থেকে প্রচুর পানি বর্ষণ করেছি, যাতে আমি তা দিয়ে শস্য ও উদ্ভিদ উৎপাদন করতে পারি।
(১৬) আরো উৎপন্ন করতে পারি ঘন উদ্যানসমূহ।
(আল-কোরআনুল কারীম সরল অনুবাদ: ১২২৬-১২২৭, আহাসানুল বায়ান: ১০৫০-১০৫১, কোরআন মাজীদ সহজ-সরল অনুবাদ: ৯৬৫-৯৬৬) ।

আয়াতের ভাবার্থ:
কোন বিষয় সম্পর্কে কোরাইশ গোত্রের কাফের-মোশরেকরা পরস্পরে জিজ্ঞাসাবাদ করছে? অবশ্যই তারা রাসূলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক নিয়ে আসা কোরআনকে সম্পর্কে মতভেদ করছে, কারণ এ কোরআন পুনরুত্থান দিবস সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন: এ ধরণের মতভেদ করা কখনও ঠিক নয়, তারা অচিরেই পুনরুত্থান দিবসকে স্বচক্ষে দেখতে পাবে। আল্লাহ তায়ালা আবারও তাকীদ দিয়ে বলেছেন, এ ধরণের আচরণ কখনও ঠিক নয়, তারা অচিরেই এর ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে জানতে পারবে। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাঁর কুদরাত বর্ণনার মাধ্যমে পুনরুত্থান দিবস সংগঠিত হওয়ার যৌক্তিক দলীল পেশ পূর্বক বলেন: তোমরা কি দেখছোনা আমি যমীনকে সমতল আকারে তৈরি করে তোমাদের জন্য শয্যা হিসেবে নির্ধারণ করেছি এবং পর্বতসমূহকে যমীনের সাথে পেরেক মেরে দিয়েছি যাতে তা স্থির থাকে। আর আমি প্রজননের জন্য তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি। আর আমি নিদ্রাকে তোমাদের জন্য বিশ্রাম বানিয়েছি। আর রাত্রকে বানিয়েছি আবরণ, যাতে আরামে বিশ্রাম নিতে পারো। আর দিনকে বানিয়েছি জীবিকার্জনের সময়, যাতে তোমরা জীবিকার্জন করে আরাম আয়েশে জীবনযাপন করতে পারো। এছাড়াও আমি তোমাদের উপর সাতটি সুদৃঢ় আকাশকে যমীনের জন্য ছাদ করেছি, যা তারকারাশি দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। তোমাদেরকে বাচিয়ে রাখার জন্য সূর্য নামক একটি উজ্জ্বল প্রদীপ সৃষ্টি করেছি। অনুরুপভাবে আমি মেঘমালা থেকে প্রচুর পানি বর্ষণ করেছি, যাতে আমি তা দিয়ে তোমাদের জীবিকার জন্য শস্য, উদ্ভিদ এবং ঘন উদ্যানসমূহ উৎপাদন করতে পারি। উল্লেখিত ক্ষমতা দেখেও তোমরা বিশ্বাস করছো না যে, যিনি এত কিছু করতে পেরেছেন, তিনি অবশ্যই পুনরুত্থান দিবসে মানবজাতিকে পুনর্জীবিত করে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাতে পারবেন। (আইসার আল-তাফাসীর: ৫/৫০১-৫০২, আল-তাফসীর আল-মোয়াস্সার: ১/৫৮২, আল-মোন্তাখাব: ৮৭৭-৮৭৮) ।

আয়াতের অস্পষ্ট শব্দের ব্যাখ্যা:
(النَّبَإِ الْعَظِيمِ) ‘মহাসংবাদ’, অত্র আয়াতাংশ দ্বারা উদ্দেশ্য কি? এ বিষয়ে তাফসীরকারকদের থেকে দুইটি মত পাওয়া যায়: (ক) আল-কোরআন আল-কারীম এবং (খ) কিয়ামতের দিন। (গরীব আল-কোরআন, ইবনু কুতাইবা: ৪৩৪) ।
তবে ইমাম ইবনু কাছীর (র.) দ্বিতীয় মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন, কারণ তৃতীয় নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে: যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করে। (তাফসীর ইবনু কাছীর: ৮/৩০২) ।
(سِرَاجًا وَهَّاجًا) ‘একটি উজ্জ্বল প্রদীপ’, অত্র আয়াতাংশ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: সূর্য। (গরীব আল-কোরআন, ইবনু কুতাইবা: ৪৩৪) ।
(سَبْعًا) ‘সাতটি’, অত্র আয়াতাংশে সাত সংখ্যা দ্বারা সাত আকাশকে বুঝানো হয়েছে। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩০/১১) ।

অত্র সূরার সাথে পূর্ববর্তী সূরার সম্পর্ক:
পূর্ববর্তী সূরা তথা সূরা মুরসালাত এ পুনরুত্থান দিবস সংগঠিত করা আল্লাহ তায়ালার জন্য খুবই সহজ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আর অত্র সূরা তথা সূরা আন-নাবা তেও একই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। (তাফসীর মাওজূয়ী, মোস্তফা মুসলিম: ১০/৩) ।

সূরা আন-নাবা এর (১-২) আয়াত অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট:
ইবনু জারীর আততবারী (র.) হাসান (র.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) রিসালাতের দায়িত্ব নিয়ে প্রেরিত হলে মক্কার কাফের-মোশরেকরা নিজেদের মধ্যে কানাকানি শুরু করে দেয়। তখন আল্লাহ তায়ালা অত্র সূরার প্রথম দুইটি আয়াত অবতীর্ণ করেন। (লুবাব আল-নুক‚ল, সুয়ূতী: ৩৫১) ।

সূরা আন-নাবা এর (১-১৬) আয়াতের শিক্ষা:
১। অত্র সূরার (১-৩) নাম্বার আয়াতে কোরআন এবং পুনরুত্থান দিবসকে মহান বিষয় আখ্যা দেওয়া হয়েছে। অনুরুপভাবে পুনরুত্থান দিবস সংগঠিত হবে মর্মে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
২। অত্র সূরার (৪-৫) আয়াতে বলা হয়েছে যে, যারা কোরআন ও পুনরুত্থান দিবসকে অস্বীকার করে, তারা রাসূলুল্লাহ (সা.) যে বিষয়ের সংবাদ দিয়েছেন তার সত্যতা অচিরেই জানতে পারবে।
৩। অত্র সূরার (৬-১৬) নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নয়টি বিষয়ে তাঁর অপরিসীম ক্ষমতা বর্ণনার মাধ্যমে পুনরুত্থান দিবস সংগঠিত করতে তিনি যে সক্ষম তার স্বপক্ষে যৌক্তিক দলীল পেশ করেছেন:
(ক) যমীনকে সমতল আকারে বিছানা স্বরুপ তৈরি করা।
(খ) পর্বতসমূহকে যমীনের সাথে পেরেক মেরে পৃথিবীকে স্থির রাখা।
(গ) প্রজননের জন্য মানবজাতিকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা।
(ঘ) নিদ্রাকে প্রাণীকুলের জন্য বিশ্রাম হিসেবে নির্ধারণ করা।
(ঙ) বিশ্রামকে আরামদায়ক বনানোর জন্য রাত্রকে আবরণ বানানো।
(চ) দিনকে জীবিকার্জনের সময় হিসেবে নির্ধারণ করা।
(ছ) সাতটি সুদৃঢ় আকাশকে যমীনের জন্য ছাদ বানিয়ে তা তারকারাশি দিয়ে সজ্জিত করা।
(জ) সৃষ্টিকুলকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সূর্য নামক একটি উজ্জ্বল প্রদীপ সৃষ্টি করা।
(ঝ) সৃষ্টিকুলের জীবিকার জন্য শস্য, উদ্ভিদ এবং ঘন উদ্যানসমূহ উৎপাদন করার লক্ষ্যে মেঘমালা থেকে পরিমিত পানি বর্ষণ করা।

আয়াতাবলীর শিক্ষা:
(ক) তাহাজ্জুদ সালাতে সূরা আন-নাবা তেলাওয়াত করা।
(খ) পুনরুত্থান দিবসের প্রতি ঈমান এনে আখেরাত ভিত্তিক জীবনযাপন করা।
(গ) কোন বিষয়ে নিজেদের ভিতর অতি কানাকানি না করে বিশেষজ্ঞদের স্মরনাপন্ন হওয়া।

Leave a Reply

error: Content is protected !!