(১) কোরআনের খাদেমকে আল্লাহ চাওয়া ছাড়াই সর্বোত্তম রিযক দেন:
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “يَقُولُ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ مَنْ شَغَلَهُ الْقُرْآنُ وَذِكْرِي عَنْ مَسْأَلَتِي أَعْطَيْتُهُ أَفْضَلَ مَا أُعْطِي السَّائِلِينَ وَفَضْلُ كَلَامِ اللَّهِ عَلَى سَائِرِ الْكَلَامِ كَفَضْلِ اللَّهِ عَلَى خَلْقِهِ” (سنن الترمذي: 2926).
অর্থাৎ: “আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তায়ালা বলেন: যে ব্যক্তি কোরআন তেলাওয়াত এবং আমার যিকরে ব্যস্ত থাকার কারণে আমার কাছে চাইতে পারে না, আমি তাকে ঐ ব্যক্তির চেয়ে বেশী দেই, যে আমার কাছে চায়। আর আল্লাহর বাণীর ফযিলত সকল বাণীর উপর যেমনিভাবে আল্লাহর মর্যাদা সকল সৃষ্টির উপর” (সুনানে তিরমিযী: ২৯২৬)।
হাদীসের হুকুম: হাসান, একটি সনদে বর্ণিত হয়েছে (গরীব) ।
(২) গাছ রোপণ কিংবা ফসল উৎপাদন সদকায়ে জারিয়া:
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ-، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ-: “مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا، أَوْ يَزْرَعُ زَرْعًا، فَيَأْكُلُ مِنْهُ طَيْرٌ أَوْ إِنْسَانٌ أَوْ بَهِيمَةٌ، إِلَّا كَانَ لَهُ بِهِ صَدَقَةٌ” (متفق عليه، البخاري: 2320).
অর্থাৎ: আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “যে কোন মুসলিম ফলবান গাছ রোপণ করে কিংবা কোন ফসল ফলায় আর তা হতে পাখী কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু খায় তবে তা তার পক্ষ হতে সদাকা বলে গণ্য হবে”। (মুত্তাফাকুন আলাই, সহীহ বুখারী: ২৩২০) ।
হাদীসের হুকুম: সহীহ।
(৩) ভাইরাল হওয়ার চেষ্টা ইসলামী সংস্কৃতি নয় এটা পশ্চিমা অপসংস্কৃতি:
عَنِ ابْنِ عُمَرَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا-، قَالَ: مَرَّ عُمَرُ بِمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا- وَهُوَ يَبْكِي، فَقَالَ: مَا يُبْكِيكَ؟ فَقَالَ: حَدِيثٌ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ -صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ-: “إِنَّ أَدْنَى الرِّيَاءِ شِرْكٌ، وَأَحَبَّ الْعَبِيدِ إِلَى اللَّهِ الْأَتْقِيَاءُ الْأَخْفِيَاءُ، الَّذِينَ إِذَا غَابُوا لَمْ يُفْتَقَدُوا، وَإِذَا شَهِدُوا لَمْ يُعْرَفُوا، أُولَئِكَ أَئِمَّةُ الْهُدَى وَمَصَابِيحُ الْعِلْمِ”. (المستدرك على الصحيحين للحاكم: 5182).
অর্থাৎ: আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: ওমর (রা.) মুয়াজ ইবনু জাবাল (রা.) এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলেন তিনি কাঁদতেছেন। ওমর (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন কাঁদছো কেন? মুয়াজ (রা.) উত্তর দিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে একটি হাদীস শুনেছি, যা আমাকে কাঁদাচ্ছে। হাদীসটি হলো: “নিশ্চয় লোক দেখানোর মনোভাব শিরক, আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম বান্দা হলো লোকদৃষ্টির আড়ালের মোত্তাকী ব্যাক্তিবর্গ, যারা অনুপস্থিত থাকলে স্মরণ করা হয় না এবং উপস্থিত থাকলে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। তারাই হলো হেদায়েতের ইমাম এবং জ্ঞানের আলোকবার্তিকা” (আল-মোস্তাদরিক আলা সহীহাইন, আবু আব্দিল্লাহ আল-হাকীম: ৫১৮২)।
হাদীসের মান: ব্যাখ্যাকারক মোস্তফা আব্দুল কাদীর আতা (র.) বলেন: হাদীসটি সহীহ, যদিও বুখারী এবং মুসলিমে উল্লেখ করা হয়নি।
হাদীসের শিক্ষা:
(ক) পরিচিতি লাভের মনোভাব নিয়ে কথা বা কাজ করা শিরক।
(খ) লোক দেখানো বা পরিচিতি লাভের জন্যে কাজ করা গুণাহের কাজ হওয়া সত্যেও সাধারণভাবে বেশীর ভাগ মানুষ এটার মধ্যে নিমজ্জিত আছে; এজন্যই মুয়াজ ইবনু জাবাল (রা.) এর ভয়ে কাঁদতেছিলেন।
(গ) যারা নিজেকে লোকদৃষ্টির আড়ালে রেখে কাজ করেন, তারা আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম বান্দা।
(ঘ) যারা জ্ঞান ও হেদায়েতের আলো ছড়ায় তারা লোকদৃষ্টির আড়ালে থেকে কাজ করে।
(৪) মৃত্যুর পরে মানুষের একমাত্র সঙ্গী তার আমল:
عن أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ -رضي الله عنه- قال، قَالَ رَسُولُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم-: “يَتْبَعُ الْمَيِّتَ ثَلاَثَةٌ فَيَرْجِعُ اثْنَانِ وَيَبْقَى مَعَهُ وَاحِدٌ يَتْبَعُهُ أَهْلُهُ وَمَالُهُ وَعَمَلُهُ فَيَرْجِعُ أَهْلُهُ وَمَالُهُ وَيَبْقَى عَمَلُهُ”.
অর্থাৎ: আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তির অনুসরণ করে (সঙ্গে যায়)। দাফনের পর দু’টি ফিরে আসে, আর একটি তার সাথেই থেকে যায়। সে তিনটি হল তার পরিবারবর্গ, তার মাল ও তার আমল। দাফনের পর তার পরিবারবর্গ ও মাল ফিরে আসে। আর তার আমল তার সাথেই থেকে যায়। (মুত্তাফাকুন আলাইহি, বুখারী ৬৫১৪, মুসলিম ৭৬১৩)।
হাদিসের মানঃ সহীহ।
হাদীসের শিক্ষা:
(ক) বেশী বেশী নেকআমল করা।
(খ) আত্মীয়-স্বজন ও ধন সম্পদের ভালোবাসার চেয়ে নেকআমল করাকে বেশী ভালোবাসা।