Skip to main content

সূরা আলে-ইমরানের (৬৪-৬৮) আয়াতাবলীর তাফসীর, আলোচ্যবিষয়: একাত্ববাদের ডাক।

﴿قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ (64) يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تُحَاجُّونَ فِي إِبْرَاهِيمَ وَمَا أُنْزِلَتِ التَّوْرَاةُ وَالْإِنْجِيلُ إِلَّا مِنْ بَعْدِهِ أَفَلَا تَعْقِلُونَ (65) هَا أَنْتُمْ هَؤُلَاءِ حَاجَجْتُمْ فِيمَا لَكُمْ بِهِ عِلْمٌ فَلِمَ تُحَاجُّونَ فِيمَا لَيْسَ لَكُمْ بِهِ عِلْمٌ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ (66) مَا كَانَ إِبْرَاهِيمُ يَهُودِيًّا وَلَا نَصْرَانِيًّا وَلَكِنْ كَانَ حَنِيفًا مُسْلِمًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ (67) إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِإِبْرَاهِيمَ لَلَّذِينَ اتَّبَعُوهُ وَهَذَا النَّبِيُّ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُؤْمِنِينَ (68)﴾ [سورة آل عمران: 64-68].

আয়াতাবলীর আলোচ্যবিষয়: একাত্ববাদের ডাক।

আয়াতাবলীর সরল অনুবাদ ও শব্দার্থ:
৬৪ হে আল্লাহর রাসূল! তুমি বলো: হে আহলে কিতাব! এসো এমন কালেমার দিকে যা আমাদের মধ্যে এবং তোমাদের মধ্যে সমান; (তা এই যে) আমরা ইবাদত করব না আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো, শরীক করবো না তাঁর সাথে কাউকে এবং আমাদের কেউ আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে রব হিসেবে গ্রহণ করবো না। আর যদি তারা বিমুখ হয়, তাহলে তোমরা বলো: তোমরা সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম।
৬৫। হে আহলে কিতাব! কেন বিতর্ক করছো ইব্রাহীমকে নিয়ে? অথচ তাওরাত ও ইনজীল অবতীর্ণ হয়েছিলো তার আগমণের পরে, তোমরা কি বুঝবে না?
৬৬। সাবধান! তোমরা তো সে সব লোক যারা বিতর্ক করছো এমন বিষয়ে, যে সম্পর্কে তোমাদের জ্ঞান রয়েছে; তাহলে তোমরা কেন বিতর্ক করছো এমন বিষয়ে, যার জ্ঞান তোমাদের নেই; আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জানো না।
৬৭। ইব্রাহীম ইহুদীও ছিলো না এবং খৃষ্টানও ছিলো না, বরং সে ছিলো একনিষ্ঠ মুসলিম, আর সে ছিলো না মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত।
৬৮। নিশ্চয় ইব্রাহীমের সবচেয়ে নিকটবর্তী মানুষ হলো যারা তার অনুসরণ করেছে এবং এই নবীর ও মুমিনগণ; আর আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক।

আয়াতাবলীর ভাবার্থ:
আল্লাহ তায়ালা মোহাম্মদ রাসূলুল্লাহর (সা.) মাধ্যমে আহলে কিতাবকে তাওহীদের কালেমার দিকে আহবান করেছেন, যার অনুসরণ করা মুসলিম, খৃষ্টান ও ইহুদী নির্বিশেষে সকলের জন্য কর্তব্য। আর তাওহীদের কালেমা হলো: (ক) আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করা, (খ) তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা এবং (গ) নিজেদের মধ্যে কাউকে বিভিন্ন উপাদিতে ভ‚ষিত করে রবের স্থানে না বসানো। আর যদি তারা এ দাওয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে যেন মুসলিমরা তাদেরকে সাক্ষী রেখে নিজেদেরকে মুসলিম হওয়ার ঘোষণা দেয়।
ইহুদী-খৃষ্টানরা দাবী করতো ইব্রাহীম (আ.) তাদের ধর্মের অনুসারী ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা মোহাম্মদ রাসূলুল্লাহর (সা.) মাধ্যমে তাদের এ অযৌক্তিক দাবীর জবাব দেন। তারা কিভাবে ইব্রাহীমকে (আ.) ইহুদী অথবা খৃষ্টান হওয়ার দাবী করে? অথচ ইব্রাহীমের (আ.) আগমণ হয়েছে তাদের চেয়ে হাজার হাজার বছর পূর্বে। তারা নিজেদের দাবীর ব্যাপারে অন্ধ হয়ে গেছে। ফলে তারা কি বলছে? তা উপলব্দি করতে পারছে না।
তারা মোহাম্মদ রাসূলুল্লাহর (সা.) সাথে তাদের ধর্মীয় বিষয়, যা সম্পর্কে তারা ধারণা রাখে, সে বিষয়ে তর্ক করলে তা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু তারা কেন ইব্রাহীমের (আ.) বিষয়ে তর্ক করে? যার সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞান নেই। তারা যে বিষয়ে তর্ক করে তার হাকীকত সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না, বরং আল্লাহ তায়ালাই সাম্যক জ্ঞাত।
আসল কথা হলো: ইব্রাহীম (আ.) ইহুদী অথবা খৃষ্টান কোনটাই ছিলেন না; কারণ তিনি ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্ম আসার বহু পূর্বে এসেছেন। বরং তিনি ছিলেন আল্লাহ তায়ালার একান্ত অনুসারী এবং তিনি মুশরিকদের দলভুক্তও ছিলেন না।
তিন শ্রেণীর মানুষ ইব্রাহীমের (আ.) আপনজন: (ক) যারা তার অনুসরণ করেছে, (খ) যারা মোহাম্মদের (সা.) অনুসরণ করে এবং (খ) যারা ঈমান গ্রহণ করেছে। আর আল্লাহ হলেন মুমিনদের অভিভাবক এবং কাফেরৃ-মুশরিকদের শত্রæ। (আইসার আল-তাফসীর: ১/৩২৮, আল-তাফসীর আল-মুয়াস্সার: ১/৫৮, আল-মোন্তাখাব: ১/৯৬) ।

আয়াতাবলীর অস্পষ্ট শব্দের ব্যাখ্যা:
﴿أَهْلَ الْكِتَابِ﴾ “আহলুল কিতবা”, আয়াতাংশ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: ইহুদী এবং খৃষ্টান জাতি; কারণ ইহুদীদের উপর তাওরাত এবং খৃষ্টানদের উপর ইনজীল অবতীর্ণ হয়েছে। (আইসার আল-তাফাসীর, জাযায়িরী: ১/৩২৭) ।
﴿كَلِمَةٍ سَوَاءٍ﴾ “সাম্যের বাণী”, আয়াতাংশ দ্বারা তাওহীদের কালেমাকে বুঝানো হয়েছে, যা তিনটি বিষয়কে অন্তর্ভূক্ত করে: (ক) আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করা, (খ) তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা এবং (গ) নিজেদের মধ্যে কাউকে বিভিন্ন উপাদিতে ভ‚ষিত করে রবের স্থানে না বসানো। (সূরা আলে-ইমরান: ৬৪) ।
﴿أَرْبَابًا﴾ “রবসমূহ”, আয়াতাংশে ‘আরবাব’ শব্দটি আরবী, যা ‘রব’ শব্দের বহুবচন। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: আল্লাহর অনুসরণ বাদ দিয়ে অন্য কাউকে অনুসরণীয় মাবুদ বানানো। (আইসার আল-তাফাসীর, আল-জাযায়িরী: ১/৩২৭) ।
﴿حَنِيفاً مُسْلِماً﴾ “একনিষ্ঠ মুসলিম”, আয়াতাংশ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: বাতিল ধর্ম থেকে বিমুখ হয়ে সত্য ধর্মের দিকে ফিরে আসা। (আইসার আল-তাফাসীর, আল-জাযায়িরী: ১/৩২৭) ।

(৬৫-৬৭) নাম্বার আয়াত অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট:
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নাজরান থেকে খৃষ্টানদের একটি প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহর (সা.) কাছে এসে দাবী করলো যে ইব্রাহীম (আ.) খৃষ্টান ছিলেন এবং ইহুদী আহবাররা দাবী করলো যে ইব্রাহীম (আ.) ইহুদী ছিলেন। তাদের এ ভ্রান্ত দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা অত্র সূরার (৬৫-৬৭) আয়াতাবলী অবতীর্ণ করেন। (আসবাব আল-নুযূল, সুয়ূতী: ৬৩-৬৪) ।
ইহুদীরা রাসূলুল্লাহকে (সা.) বললো: ইব্রাহীম (আ.) ইহুদী হওয়ার কারণে আমরা তোমাদের চেয়ে তার বেশী নিকটবর্তী। আর এগুলো দেখে তুমি আমাদের সাথে হিংসা করে বেড়াচ্ছো। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা অত্র সূরার ৬৮ নাম্বার আয়াত অবতীর্ণ করে ইব্রহীমের (আ.) প্রকৃত আপনজন সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন। (তাফসীর আল-মুনীর, জুহাইলী: ৩/২৫১) ।

আয়াতাবলীর শিক্ষা:
১। চৌষাট্টি নাম্বার আয়াতে চারটি বিষয় পরিলক্ষিত হয়:
(ক) অত্র আয়াতে ইহুদী-খৃষ্টান সহ সকল আহলে কিতাবকে সম্বোধন করা হয়েছে; কারণ তারা তাদের আলেমদেরকে রব বানিয়েছে। একবার রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলা হলো তারা তো তাদের আলেমদের ইবাদত করে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) উত্তর দিলেন তারা কি তাদের আলেমগণ আল্লাহ কর্তৃক হারামকৃত বস্তুর মধ্যে যা হালাল করে তাকে হালাল মনে করে এবং হালালকৃত বস্তু যা হারাম করে তাকে হারাম মনে করে? সাহাবায়ে কিরাম বললেন: হ্যা, ইয়া রাসূলাল্লাহ। তিনি বললেন: এটাই ইবাদতের নাম্বান্তর। (সুনান আল-তিরমিযী: ৩০৯৫, হাদীসটি হাসান) । এ সম্পর্কে সূরা তাওবার একত্রিশ নাম্বার আয়াতে বর্ণনা এসেছে, সেখানে বলা হয়েছে:
﴿اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَهًا وَاحِدًا لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ﴾ [سورة التوبة: ৩১].
অর্থাৎ: “তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের আহবার ও রুহবানদেরকে রব হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং ঈসা ইবনু মারইয়ামকেও। অথচ তারা আদিষ্ট হয়েছিল কেবল এক আল্লাহর ইবাদত করতে যিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই, তারা যে শিরক করে তা থেকে আল্লাহ পুতপবিত্র” (সূরা তাওবা: ৩১) ।
(খ) আয়াতে তাওহীদের কালেমা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: (ক) আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করা, (খ) তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা এবং (গ) নিজেদের মধ্যে কাউকে বিভিন্ন উপাদিতে ভ‚ষিত করে রবের স্থানে না বসানো। (সূরা আলে-ইমরান: ৬৪) ।
(গ) যারা ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে একজন মুসলিম তাদেরকে নিজের মুসলিম হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষী রেখে তাদেরকে তাদের পথে ছেড়ে দিবে। (তাফসীর আল-মুনীর, জুহাইলী: ৩/২৫৩) ।
(গ) রাসূলুল্লাহ (সা.) রোম, পারস্য এবং হাবশা সহ যত দেশের রাজা-বাদশাহের কাছে ইসলামের দাওয়াত সম্বলিত চিঠি পাঠিয়েছেন অত্র আয়াত তার সারমর্ম। যেমন: সহীহ মুসলিমে বর্ণিত রোম স¤্রাট হেরাক্লিয়াসের কাছে পাঠানো চিঠিটি উল্লেখযোগ্য, যেখানে বলা হয়েছে:
“بسم الله الرّحمن الرّحيم. من محمد رسول الله إلى هرقل عظيم الرّوم. سلام على من اتّبع الهدى، أما بعد: فإني أدعوك بدعاية الإسلام، أسلم تسلم، وأسلم يؤتك الله أجرك مرتين، فإن توليت، فإن عليك إثم الأريسيين- أي الشعب من فلاحين وخدم وأتباع وغيرهم، ويا أَهْلَ الْكِتابِ تَعالَوْا إِلى كَلِمَةٍ سَواءٍ بَيْنَنا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ، وَلا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئاً، وَلا يَتَّخِذَ بَعْضُنا بَعْضاً أَرْباباً مِنْ دُونِ اللَّهِ، فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُولُوا: اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ”.
অর্থাৎ: “পরম করুণাময় আল্লাহর নামে। আল্লাহর রাসূল মোহাম্মদের পক্ষ থেকে রোম স¤্রাট হেরাক্লিয়াসের কাছে। হেদাকামীদের প্রতি আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি আপনাকে ইসলামের দিকে দাওয়াত করছি। আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি, আপনিও ইসলাম গ্রহণ করুন। আপনি ইসলাম গ্রহণ করলে দ্বিগুণ সাওয়াব প্রদান করা হবে। আর যদি প্রত্যাক্ষ্যান করেন, তাহলে আপনার দেশের জনগণের পাপের বোঝাও আপনাকে বহণ করতে হবে। অতঃপর অত্র আয়াতটি উল্লেখ করলেন। (তাফসীর আল-মুনীর, জুহাইলী: ৩/২৫৩) ।
(ঘ) উল্লেখিত আয়াতে দুই প্রকার তাওহীদের বর্ণনা এসেছে: (ক) “আমরা যেন আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত না করি” আয়াতাংশ দ্বারা ‘তাওহীদ আল-উলুহিয়্যাহ’ এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। (খ) “আমরা যেন আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের মধ্যে কাউকে রব হিসেবে গ্রহণ না করি” আয়াতাংশ দ্বারা ‘তাওহীদ আল-রুবুবিয়্যাহ’ এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে সকল নবী-রাসূলগণ মানবজাতিকে তাওহীদের দিকে আহবান করেছেন। যেমন: আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেছেন:
﴿وَما أَرْسَلْنا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ: لا إِلهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ﴾ [سورة الأنبياء: ২৫].
অর্থাৎ: “আমি আপনার পূর্বের সকল নবীকে এই মর্মে অহী প্রদান করেছি যে, আমি ছাড়া কোন হক্ব ইলাহ নেই, অতএব তোমরা কেবল আমারই ইবাদত করো” (সূরা আল-আনবিয়া: ২৫) ।
﴿وَلَقَدْ بَعَثْنا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ، وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ﴾ [سورة النحل: ৩৬].
অর্থাৎ: “অবশ্যই আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের কাছে এ নির্দেশ দিয়ে রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা কেবল আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুতকে পরিহার করো” (আল-নাহল: ৩৬) ।
২। ইহুদী-খৃষ্টানদের দাবী ইব্রাহীম (আ.) ইহুদী অথবা খৃষ্টান ছিলেন। তাদের এ ভ্রান্ত দাবীর জবাবে আল্লাহ তায়ালা (৬৫-৬৮) আয়াতে সংলাপমূলক পদ্ধতিতে প্রমাণ করেছেন যে তিনি ইহুদী, খৃষ্টান এবং মুশরিক কোনটিই ছিলেন না:
প্রথমত: আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি আল-সুয়াল আল-ইজবারী বা বাধ্যতামূলক প্রশ্ন ছুড়ে মেরেছেন, তারা কিভাবে ইব্রাহীমকে (আ.) ইহুদী-খৃষ্টান হওয়ার দাবী করতে পারে, অথচ তার আগমণ হয়েছে ইহুদী-খৃষ্টান নামে দুইটি ধর্মের প্রবর্তনের অনেক আগে?
দ্বিতিয়ত: তাদের বোকামী ও অজ্ঞতাকে প্রকাশ করে দিয়েছেন, মূসা এবং ঈসা (আ.) সম্পর্কে তাদের জানা থাকার কারণে কথা বলাতে কোন সমস্যা নেই, কিন্তু তারা কিভাবে ইব্রাহীমকে (আ.) নিয়ে কথা বলে, যার সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞান নেই।
তৃতীয়ত: ইব্রাহীম (আ.) আসলে কোন ধর্মের ছিলেন, সে বিষয়ে আল্লাহর সিদ্ধান্ত প্রকাশ করে দিয়েছেন, তিনি ইহুদী, খৃষ্টান এবং মুশরিক কোনটারই অনুসারী ছিলেন না, বরং তিনি একজন খাটি আল্লাহর অনুসারী ছিলেন।
চত‚র্থত: ইব্রাহীমের (আ.) সাথে কাদের সুসম্পর্ক বেশী তা প্রকাশ করেছেন, তার সাথে ইহুদী, খৃষ্টান ও মুশরিকদের কোন সম্পর্ক নেই, বরং সম্পর্কের দিক থেকে তার আপনজন হলো তিন শ্রেনীর মানুষ: (ক) যারা তার অনুসরণ করেছে, (খ) যারা মোহাম্মদের (সা.) অনুসরণ করে এবং (খ) যারা ঈমান গ্রহণ করেছে। (তাফসীর আল-মুনীর, জুহাইলী: ৩/২৫৫) ।
৩। উল্লেখিত আয়াতাবলী থেকে বুঝা যায় সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রয়োজনে তর্ক করা ওয়াজিব। এ সম্পর্কে সূরা নাহল এর ১২৫ নাম্বার আয়াত সহ আরো অনেক আয়াত রয়েছে। (তাফসীর আল-মুনীর, জুহাইলী: ৩/২৫৭) ।

আয়াতাবলীর আমল:
(ক) একজন দায়ী সর্বদা মানবজাতিকে তাওহীদের দিকে আহবান করবে।
(খ) সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রয়োজনে তর্ক করা যাবে।
(গ) যে বিষয়ের জ্ঞান রয়েছে, কেবল সে বিষয়ে তর্ক করা যাবে।

Leave a Reply

error: Content is protected !!