﴿قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ (31) قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ (32)﴾ [سورة آل عمران: 31-32].
আয়াতদ্বয়ের আলোচ্যবিষয়: আল্লাহর ভালোবাসা পেতে রাসূলুল্লাহর (সা.) অনুসরণ শর্ত।
আয়াতদ্বয়ের সরল অনুবাদ ও শব্দার্থ:
৩১। বলো: যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমাকে অনুসরণ করো; আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং ক্ষমা করে দিবেন তোমাদের অপরাধসমূহ; বস্তুতঃ আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
৩২। বলো: তোমরা অনুসরণ করো আল্লাহর এবং রাসূলের, কিন্তু যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালোবাসেন না।
আয়াতদ্বয়ের ভাবার্থ:
নাজরান থেকে আগত খৃষ্টান প্রতিনিধি দল ঈসা (আ.) এবং তার মা মারইয়াম (আ.) কে সম্মান প্রদর্শন ও অনুসরণ করাকে আল্লাহর ভালোবাসা লাভের একমাত্র উপায় দাবী করলে আল্লাহ তায়ালা তাদের ভ্রান্ত দাবীকে খন্ডন পূর্বক রাসূলুল্লাহ (সা.) কে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি যেন তাদেরকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন তারা যদি আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চায়, তাহলে যেন ঈসা ও মারইয়ামের (আ.) অনুসরণ বাদ দিয়ে মোহাম্মদ (সা.) এর অনুসরণ করে। তারা যদি তাকে অনুসরণ করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তাদের যাবতীয় পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন।
অতঃপর আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মাধ্যমে নাজরানের খৃষ্টান সহ সকল মানুষকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) অনুসরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তারা যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) কে অনুসরণ করতে অস্বীকার করে, তাহলে তারা আল্লাহর ক্রোধে পতিত হবে এবং তিনি তাদেরকে কখনও ভালোবাসবেন না। (আইসার আল-তাফসীর: ১/৩০৮, আল-তাফসীর আল-মুয়াস্সার: ১/৫৪, আল-মোন্তাখাব: ১/৮৯) ।
আয়াতদ্বয়ের অস্পষ্ট শব্দের ব্যাখ্যা:
﴿تُحِبُّونَ اللَّهَ﴾ “তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো”, সকল তাফসীরকারক একমত যে, আল্লাহকে ভালোবাসার অর্থ হলো: তাঁর বড়ত্ব, মহত্ব এবং অনুসরণকে ভালোবাসা। (আল-তাফসীর আল-কাবীর, রাযী: ৮/১৯৭) ।
﴿يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ﴾ “আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন”, সকল তাফসীরকারক একমত যে, আল্লাহকর্তৃক মানুষকে ভালোবাসার অর্থ হলো: “মানুষের জন্য কল্যাণ, ক্ষমা এবং রহমতকে ভালোবাসা”। (আল-তাফসীর আল-কাবীর, রাযী: ৮/১৯৭) ।
﴿لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ﴾ “আল্লাহ কাফেরদেরকে ভালোবাসেন না”, সকল তাফসীরকারক একমত যে, আয়াতাংশের অর্থ হলো: “আল্লাহ কাফেরদের প্রতি কল্যাণ, ক্ষমা এবং রহমতকে ভালোবাসেন না”। (তাফসীর আল-কুরতুবী: ৪/৬০) ।
উল্লেখিত আয়াতাবলীর সাথে পূর্বের আয়াতাবলীর সম্পর্ক:
পূর্বের আয়াতবলীতে আল্লাহর কামালিয়াত, তাঁর ক্ষমতা এবং তাকে বাদ দিয়ে কাফেরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর উল্লেখিত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা অর্জনের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং আয়াতাবলীর মধ্যে সম্পর্ক স্পষ্ট। (তাফসীর আল-মুনীর, ওয়াহাবা আল-জুহাইলী: ৩/১৯৯) ।
৩১ নাম্বার আয়াত অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট:
হাসান ও ইবনু জুরাইজ (র.) বলেন: কতিপয় কাফির-মুশরিক রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে বললো: হে মোহাম্মদ! আল্লাহর কসম করে বলছি: আমরা অবশ্যই আমাদের রবকে ভালোবাসি। অতঃপর অত্র আয়াত অবতীর্ণ করে আল্লাহকে ভালোবাসার পদ্ধতি তাদেরকে জানিয়ে দিলেন। (লুবাব আল-নুক‚ল, সুয়ূতী: ৬২) ।
মোহাম্মদ ইবনু জা’ফর (র.) বলেন: অত্র আয়াত নাজরানের খৃষ্টান সম্পর্কে অবতীর্ণ করা হয়েছে। বিস্তারিত ঘটনা হলো: তারা রাসূলুল্লাহর কাছে এসে বললো: আমরা আল্লাহকে ভালোবেসেই এবং তাঁকে সম্মান করেই ঈসা (আ.) কে সম্মান দেই এবং তার ইবাদত করি। অতঃপর অত্র আয়াত অবতীর্ণ করে আল্লাহকে ভালোবাসার পদ্ধতি তাদেরকে জানিয়ে দিলেন। (আসবাব আল-নুযূল, ওয়াহেদী: ১/১০৬) ।
আয়াতাবলীর শিক্ষা:
১। একত্রিশ নাম্বার আয়াতটি যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসার দাবী করে তার প্রতি বিচারক হিসেবে কাজ করে। সে যদি তার সকল কাজে ও কথায় রাসূলুল্লাহকে (সা.) অনুসরণ করে থাকে, তাহলে সে তার দাবীতে সত্যবাদী। অন্যথায় সে তার দাবীতে মিথ্যাবাদী। এজন্যই রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “কোন ব্যক্তি যদি এমন কাজ করে, যার আমি নির্দেশ করিনি তা অগ্রাহ্য” (সহীহ মুসলিম: ১৭১৮)।
হাসান বসরী (র.) বলেছেন: “কেউ যদি মনে করে সে আল্লাহকে ভালোবাসে, তাহলে আল্লাহ এ আয়াতের মাধ্যমে তাকে পরীক্ষা করে থাকেন”। (তাফসীর ইবনু কাসীর: ২/৩২) ।
২। সকল তাফসীরকারক একমত যে, বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহকে ভালোবাসার অর্থ হলো: তাঁর আনুগত্য হওয়াকে ভালোবাসা। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাকে ভালোবাসার অর্থ হলো: বান্দার পাপসমূহ ক্ষমা করে দিতে ভালোবাসা। (আল-তাফসীর আল-কাবীর, রাযী: ৮/১৯৭) ।
৩। ‘আল-মাহাব্বাহ’ বা ‘ভালোবাসা’ এর সমার্থবোধক আরবী ভাষায় আরেকটি শব্দ পাওয়া যায় ‘আল-ইশক্ব’। আমাদের সমাজে এ শব্দটিকে আল্লাহর শানে ব্যবহার করতে দেখা যায়। এখন প্রশ্ন হলো, আল্লাহ তায়ালার শানে কি এ শব্দটি ব্যবহার করা যাবে?
এর উত্তরে ইবনুল কাইয়্যূম (র.) বলেন: সুফী সম্প্রদায় এ শব্দটিকে আল্লাহর শানে ব্যবহার করে থাকলেও জমহুর ওলামার মত হলো: আল্লাহর শানে ‘আল-ইশক্ব’ শব্দটি আল্লাহর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না। তারা কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন:
(ক) কোরআন-সুন্নাহ এবং সাহাবায়ে কিরামের জীবন চারিতায় ‘আল-মাহাব্বাহ’ ছাড়া অন্য কোন শব্দ আল্লাহর শানে ব্যবহার হয়েছে মর্মে কোন নস পাওয়া যায় না।
(খ) ‘আল-ইশ্ক্ব’ শব্দের মধ্যে ভালোবাসার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ির অর্থ নিহীত রয়েছে, যা আল্লাহর শানে বেমানান। এছাড়ও ‘ইশ্ক্ব’ শব্দটি শাহওয়াত মিশ্রিত ভালোবাসার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। আরবী ভাষাবিধদের কাছে ‘আল-ইশ্ক্ব’ শব্দটি যাকে বিবাহ করা যায় কেবল তার ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। (তালবীসু ইবলীস, ইবনুল জাওযী: ১৫৩) । আবু হেলাল আসকারী (র.) বলেন: ‘আল-ইশ্ক্ব’ শব্দটি কেবল মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। (আল-ফুরুক্ব, আল-আসকারী: ১/১২২) ।
(গ) ‘আল-হুব্ব’ বা ‘ভালোবাসা’ আল্লাহর একটি গুণ, এটাকে অন্য কোন শব্দ দিয়ে পরিবর্তন করা যাবে না। (তালবীসু ইবলীস, ইবনুল জাওযী: ১৫৩) ।
৪। আমাদের সমাজে আরেকটি বিষয় খুব বেশী পরিলক্ষিত হয় যে, আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর রাসূলকে (সা.) নিয়ে এমন ভালোবাসা ও বিরহের গান গাওয়া হয়, যেমনটা প্রেমিক তার প্রেমিকাকে হারিয়ে এবং প্রেমিকা তার প্রেমিককে হারিয়ে গেয়ে থাকে। এটা অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) শানে বেআদবী। এর মাধ্যমে এ ধরণের গানের লেখক ও গায়ক কাফের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার অর্থ হলো: তাঁর বড়ত্ব, মহত্ব এবং অনুসরণকে ভালোবাসা আর রাসূলুল্লাহকে (সা.) ভালোবাসার অর্থ হলো আল্লাহর প্রেরিত রাসূল হিসেবে তাকে অনুসরণ করা। তাদের প্রতি নিজের ভালোবাসাকে যদি প্রকাশ করতেই হয়, তাহলে তা হবে তাদের প্রতি সম্মান রেখে শরয়ী পদ্ধতিতে। এজন্য লেখক ও গায়কদের উচিৎ গান-কবিতা লেখার পর শরয়ী বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তা কারেকশন করে নেওয়া। (আল্লাহই ভালো জানেন) ।
৫। ইমাম ওয়াহাবা জুহাঈলী (র.) বলেন: আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের (সা.) প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পায় তাদেরকে অনুসরণের মাধ্যমে, মুখে বলার মাধ্যমে নয়। (তাফসীর আল-মুনীর, জুহাইলী: ৩/২০৮) ।
৬। আল্লাহ তায়ালা আপনাকে ভালোবাসেন নাকি ঘৃণা করেন, তা কিভাবে বুঝবেন?
এর অতি সহজ উত্তর হলো: যদি দেখেন সাধারণ মানুষ, আপনার অধিনস্ত কর্মচারী, সহপাঠী, সহকর্মী, বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ এবং পরিবারের সদস্যের অধিকাংশই আপনাকে আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধাভরে ভালোবাসেন, আপনার অনুপস্থিতে আপনার জন্য দোয়া করেন, আপনার অজান্তে অন্যের সাথে আপনার প্রশংসা করেন এবং আপনি সমস্যায় পতিত হলে তারা কষ্ট পায়, তাহলে বুঝবেন আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসেন। কিন্তু যদি এর বিপরীত দেখেন, তাহলে মনে করবেন আল্লাহ তায়ালা আপনাকে ঘৃণা করেন। যেমন: এ সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“إِنَّ اللهَ إِذَا أَحَبَّ عَبْدًا دَعَا جِبْرِيلَ فَقَالَ: إِنِّي أُحِبُّ فُلَانًا فَأَحِبَّهُ، قَالَ: فَيُحِبُّهُ جِبْرِيلُ، ثُمَّ يُنَادِي فِي السَّمَاءِ فَيَقُولُ: إِنَّ اللهَ يُحِبُّ فُلَانًا فَأَحِبُّوهُ، فَيُحِبُّهُ أَهْلُ السَّمَاءِ، قَالَ ثُمَّ يُوضَعُ لَهُ الْقَبُولُ فِي الْأَرْضِ، وَإِذَا أَبْغَضَ عَبْدًا دَعَا جِبْرِيلَ فَيَقُولُ: إِنِّي أُبْغِضُ فُلَانًا فَأَبْغِضْهُ، قَالَ فَيُبْغِضُهُ جِبْرِيلُ، ثُمَّ يُنَادِي فِي أَهْلِ السَّمَاءِ إِنَّ اللهَ يُبْغِضُ فُلَانًا فَأَبْغِضُوهُ، قَالَ: فَيُبْغِضُونَهُ، ثُمَّ تُوضَعُ لَهُ الْبَغْضَاءُ فِي الْأَرْضِ” (صحيح مسلم: ২৬৩৭).
অর্থাৎ: “নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা যখন কোন বান্দাকে ভালোবাসেন, তখন জিবরীল (আ.) কে ডেকে বলেন: আমি অমুককে ভালোবাসি, অতএব তুমিও তাকে ভালোবাসতে থাকো। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: অতঃপর জিবরীল (আ.) তাকে ভালোবাসতে শুরু করেন। অতঃপর তিনি আকাশবাসীর উদ্দেশ্যে ঘোষণা দেন: অমুককে আল্লাহ ভালোবাসেন, অতএব তোমরাও তাকে ভালোবাসতে থাকো। অতঃপর আকাশবাসী তাকে ভালোবাসতে শুরু করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: ফলে যমীনবাসীর কাছেও তাকে ভালোবাসার পাত্র হিসেবে পেশ করা হয়। অপরদিকে আল্লাহ তায়ালা যখন কোন বান্দাকে ঘৃণা করেন, তখন জিবরীল (আ.) কে ডেকে বলেন: আমি অমুককে ঘৃণা করি, অতএব তুমিও তাকে ঘৃণা করতে থাকো। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: অতঃপর জিবরীল (আ.) তাকে ঘৃণা করতে শুরু করেন। অতঃপর তিনি আকাশবাসীর উদ্দেশ্যে ঘোষণা দেন: অমুককে আল্লাহ ঘৃণা করেন, অতএব তোমরাও তাকে ঘৃণা করতে থাকো। অতঃপর আকাশবাসী তাকে ঘৃণা করতে শুরু করেন। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন: ফলে যমীনবাসীর কাছেও তাকে ঘৃণার পাত্র হিসেবে পেশ করা হয়” (সহীহ মুসলিম: ২৬৩৭।
৭। আল্লাহ তায়ালাকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসা বন্দার উপর ওয়াজিব। যেমন: কোরআনের একটি আয়াতে এসেছে:
﴿وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ﴾ [سورة البقرة: ১৬৫].
অর্থাৎ: “যারা ঈমানদার, তারা আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে” (সূরা বাক্বারা: ১৬৫) ।
আল্লাহর পরে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসবে রাসূলুল্লাহকে (সা.), অতঃপর পিতা-মাতা, অতঃপর সন্তানসস্তুতি, অতঃপর পর্যায়ক্রমে বাকীদেরকে ভালোবাসবে। যেমন: আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَلَدِهِ وَوَالِدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ” (صحيح مسلم: ১৭৮).
অর্থাৎ: “যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি তোমাদের কাছে তোমাদের পিতামাতা, সন্তানসন্তুতি এবং সকল মানুষের চেয়ে বেশী প্রিয় হবো, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কেউ পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না” (সহীহ মুসলিম: ১৭৮) ।
৮। বত্রিশ নাম্বার আয়াত থেকে বুঝা যায়, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর অনুসরণকে কেউ অস্বীকার করলে সে কাফের হয়ে জাহান্নামী হয়ে যায়। তাকে অনুসরণের গুরুত্বের ব্যাপারে অসংখ্য আয়াত ও হাদীস রয়েছে। এ ব্যাপারে একটি বিখ্যাত হাদীস হলো:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ-، قَالَ: “كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى”، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَنْ يَأْبَى؟ قَالَ: “مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى” (صحيح البخاري: ৭২৮০).
অর্থাৎ: আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যারা অস্বীকার করে, তারা ছাড়া আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন: কারা জান্নাতে প্রবেশ করতে অস্বীকার করবে। তিনি উত্তরে বললেন: যারা আমাকে অনুসরণ করে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং যারা আমার অবাধ্য হয়, তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে অস্বীকার করে। (সহীহ আল-বুখারী: ৭২৮) ।
আয়াতাবলীর আমল:
(ক) আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের জন্য রাসূলুল্লাহকে (সা.) অনুসরণ করা।
(গ) মুখের কথা দিয়ে নয়, বরং আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহর (সা.) প্রতি আনুগত্য পোষণের মাধ্যমে তাদেরকে ভালোবাসা।