﴿لَا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ إِلَّا أَنْ تَتَّقُوا مِنْهُمْ تُقَاةً وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ (28) قُلْ إِنْ تُخْفُوا مَا فِي صُدُورِكُمْ أَوْ تُبْدُوهُ يَعْلَمْهُ اللَّهُ وَيَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ (29) يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُحْضَرًا وَمَا عَمِلَتْ مِنْ سُوءٍ تَوَدُّ لَوْ أَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ أَمَدًا بَعِيدًا وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ (30)﴾ [سورة آل عمران: 28-30].
আয়াতের আলোচ্যবিষয়: কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা।
আয়াতের সরল অনুবাদ:
২৮। মুমিনগণ যেন মুমিনদেরকে বাদ দিয়ে কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করে; আর যে কেউ এরুপ করবে, আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক থাকবে না; তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন ভয়ের আশংকা করো, তা হলে ভিন্ন কথা; আর আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে তাঁর শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করেছেন; এবং আল্লাহর দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন।
২৯। হে নবী! আপনি বলুন: যদি তোমরা গোপন রাখো অথবা তোমরা প্রকাশ করো যা তোমাদের অন্তরে রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তা জানেন; তিনি আরো জানেন আকাশসমূহে এবং যমীনে যা কিছু আছে; এবং আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
৩০। যেদিন প্রত্যেকে সে যা ভালো কাজ এবং মন্দ কাজ করেছে, তার উপস্থিতি পাবে; সেদিন সে কামনা করবে, যদি তার মধ্যে এবং দুষ্কর্মের মধ্যে বহুদুর ব্যবধান হতো; আর সতর্ক করেছেন তোমাদেরকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর শাস্তির ব্যাপারে; এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দার প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল ।
আয়াতের ভাবার্থ:
আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারকে তার মুমিন ভাইকে বাদ দিয়ে কাফিরদেরকে অভিভাবক বা অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন; কারণ পূর্বের আয়াতবলীতে মুমিন কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে এমন ক্ষমতাধর আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থণা করতে বলা হয়েছে, যিনি সকল ক্ষমতার উৎস, তিনি সেচ্ছায় কাউকে ক্ষমতার আসনে বসিয়ে সম্মানিত করেন আবার কাউকে ক্ষমতাচ্যুতের মাধ্যমে লাঞ্চিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা অপরিমিত রিযিক দান করেন। এমন উত্তম আশ্রয়দাতাকে বাদ দিয়ে তাঁর দুশমনকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করা স্বভাবতই বোকামী।
যারা এ নিষেধকে উপেক্ষা করে কাফেরদেরকে বন্ধু বা অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবে তাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার চারটি সতর্কবার্তা রয়েছে:
(ক) তাদের সাথে আল্লাহ তায়ালার কোন সম্পর্ক থাকবে না।
(খ) তাদেরকে যথার্থ শাস্তি দিতে আল্লাহ তায়ালা সক্ষম। মূলতঃ সবাই তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান লাভের জন্য আস্তে আস্তে তাঁরই দিকে ফিরে যাচ্ছে।
(গ) কাফেরদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার কোন বাসনা কারো অন্তরে থাকলে তা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা জানেন। তিনি শুধু মানুষের অন্তরের খবর রাখেন না, বরং আকাশ-যমীনে যা কিছু আছে সবকিছু সম্পর্কে তিনি জানেন। আল্লাহ তায়ালা সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
(ঘ) কাফেরদেরকে বন্ধু বানানো গর্হিত কাজ, আর প্রত্যেকেই তাদের ভালো-মন্দ কৃতকার্যের জন্য আখেরাতে প্রতিদান পাবে। সেদিন একদলকে মন্দ কাজের জন্য অনুতপ্ত হয়ে বিলাপ করতে দেখা যাবে।
আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি দয়াপরবশ হয়ে বিশেষ ওজরের ক্ষেত্রে কাফেরদের সাথে বন্ধুভাব আচরণ জায়েয রেখেছেন। যেমন: কাফেরদের থেকে কোন ধরণের ভয় বা ক্ষতির আশংকা থাকলে তাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করা যাবে। (আইসার আল-তাফসীর: ১/৩০৬, আল-তাফসীর আল-মুয়াস্সার: ১/৫৩-৫৪, আল-মোন্তাখাব: ১/৮৯) ।
আয়াতাবলীর অস্পষ্ট শব্দের ব্যাখ্যা:
﴿أَوْلِيَاءَ﴾ “বন্ধুগণ”, শব্দটি বহুবচন, এক বচনে ‘ওয়ালি’। ইমাম আবু বকর আল-জাযায়িরী (র.) বলেন: আয়াতাংশের অর্থ হলো: কাউকে ভালোবাসা, সহযোগিতা এবং সমর্থন প্রদানপূর্বক বন্ধু বানানো।
﴿وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ﴾ “আল্লাহ তোমাদেরকে তার নিজের ব্যাপারে সতর্ক করছেন”, এর অর্থ হলো: “তোমরা আল্লাহর অবাধ্য হলে তিনি তোমাদেরকে তাঁর শাস্তি ব্যাপারে সতর্ক করছেন”। (আইসার আল-তাফাসীর, জাযায়িরী: ১/৩০৫)।
উল্লেখিত আয়াতাবলীর সাথে পূর্বের আয়াতাবলীর সম্পর্ক:
পূর্বের আয়াতবলীতে মুমিন কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে এমন ক্ষমতাধর আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থণা করতে বলা হয়েছে, যিনি সকল ক্ষমতার উৎস, তিনি সেচ্ছায় কাউকে ক্ষমতার আসনে বসিয়ে সম্মানিত করেন আবার কাউকে ক্ষমতাচ্যুতের মাধ্যমে লাঞ্চিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা অপরিমিত রিযিক দান করেন। আর উল্লেখিত আয়াতাবলীতে আল্লাহ তায়ালার মতো এমন উত্তম আশ্রয়দাতাকে বাদ দিয়ে তাঁর দুশমন কাফির সম্প্রদায়কে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। (তাফসীর আল-মুনীর, ওয়াহাবা আল-জুহাইলী: ৩/১৯৯) ।
(২৮-২৯) আয়াতদ্বয় অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট:
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন: হাজ্জাজ ইবনু আমর নামক সাহাবী কা’ব বিন আশরাফ, ইবনু উবাই আল-হাক্বীক্ব এবং ক্বাইস ইবনু যায়েদ নামক ইহুদীদের সহযোগী ছিল। তার মাধ্যমে ইহুদী গ্রুপটির সাথে একদল আনসারী সাহাবীর সখ্যতা গড়ে উঠে, যা তাদের ঈমানের জন্য বড় পরীক্ষা ছিল। অতঃপর রিফায়াহ ইবনুল মুনজির, আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর এবং সাঈদ ইবনু খাইসামাহ তাদেরকে ইহুদীদের সাথে সম্পর্ক রাখতে নিষেধ করলে তারা সম্পর্ক ছিন্ন করতে অস্বীকার করে। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সতর্ক করানোর জন্য (২৮-২৯) আয়াত অবতীর্ণ করেন। (লুবাব আল-নুক‚ল, সুয়ূতী: ৬২) ।
আয়াতাবলীর শিক্ষা:
১। ইবনু বায (র.) সহ অধিকাংশ ওলামায়ে কিরাম বলেছেন, (২৮-২৯) নাম্বার আয়াতে কাফেরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: তাদেরকে অন্তর দিয়ে ভালোবেসে, সহযোগিতা করে এবং তাদের আক্বীদা-বিশ্বাসকে সমর্থন দিয়ে বন্ধু বানানো। (আইসার আল-তাফাসীর, জাযায়িরী: ১/৩০৫)। উল্লেখিত অর্থে কাফিরদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু বা অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করা কবীরা গুনাহ; কারণ নিষেধাজ্ঞার পরেও যারা কাফেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, তাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক চারটি সতর্কবার্তা প্রদান করা হয়েছে:
(ক) তাদের সাথে আল্লাহ তায়ালার কোন সম্পর্ক থাকবে না।
(খ) তাদেরকে যথার্থ শাস্তি দিতে আল্লাহ তায়ালা সক্ষম।
(গ) কাফেরদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার কোন বাসনা কারো অন্তরে থাকলে তা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা জানেন।
(ঘ) কাফেরদেরকে বন্ধু বানানো গর্হিত কাজ, আর প্রত্যেকেই তাদের ভালো-মন্দ কৃতকর্মের জন্য আখেরাতে প্রতিদান পাবে।
২। তবে আঠাশ নাম্বার আয়াতের শেষাংশ থেকে বুঝা যায়, কাফেরদের থেকে যদি কোন ভয়-ভীতি এবং ক্ষয়ক্ষতির আশংকা থাকে, তাহলে পবিবেশ-পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে তাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করা জায়েজ।
৩। আঠাশ নাম্বার আয়াতের শেষাংশ থেকে বুঝা যায় ইসলামে ‘তাকিয়া’ বা “আত্মরক্ষার জন্য অন্তরে সত্যকে লুকিয়ে রেখে মুখে ভিন্ন কিছু প্রকাশ করা” বৈধ। তবে এর ধরণ কেমন হবে তা নিয়ে ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত’ এবং ‘রাফিযী’ সম্প্রদায়ের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের মতে, “বড় ধরণের ক্ষতি থেকে আত্মরক্ষার তাগিদে অন্তরে যা বিশ্বাস করে তার বিপরীত কিছু উচ্চারণ বা প্রকাশ করাকে ‘তাকিয়া’ বলে”। তারা মনে করেন ‘তাকিয়া’ এর আসল হলো হারাম, তবে নি¤œবর্ণিত কয়েকটি শর্তের আলোকে তা বৈধ:
(ক) ‘তাকিয়া’ করার প্রয়োজনীয়তা বিদ্যমান থাকা, যেমন: ‘তাকিয়া’ এর আশ্রয় না নিলে কতল, প্রচন্ড শাস্তি, যে কোন অঙ্গ কর্তন ইত্যাদি বড় ধরণের ক্ষতির আশংকা করা। (তাফসীর আল-কুরতুবী: ৪/৫৭) ।
(খ) আশংকা করা ক্ষতির পরিমাণ এমন হওয়া যে তা সহ্য করা কঠিন হবে।
(গ) ‘তাকিয়া’ ছাড়া অন্য কোন উপায় না থাকা। অন্য কোন উপায় থাকলে, তা অবলম্বন করা।
(ঘ) ‘তাকিয়া’ কেবল কাফেরের সাথে করা যাবে।
অপর দিকে শীয়া সম্প্রদায়ের একটি গ্রুপ ‘রাফিযী ইসনা আশারিয়্যাহ’, যারা ‘তাকিয়া’ কে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের বিরুদ্ধে সর্বক্ষণিক ব্যবহার করাকে ওয়াজিব মনে করে থাকে। তাদের কাছে ‘তাকিয়া’ দ্বীনের মৌলিক বিষয়ের একটি, সালাত কায়েম করা যেমন ফরজ, তেমনিভাবে ‘তাকিয়া’ অবলম্বন করাও ফরজ। তারা বিশ্বাস করে যারা ‘তাকিয়া’ অবলম্বন করে না, তারা দ্বীন থেকে খারিজ হয়ে যায়। তারা তাদের পঞ্চম ইমাম জাফর সাদিকের দিকে সম্বন্ধ করে একটি কথা বলে থাকে, তিনি বলেছেন: “তাকিয়া আমার এবং আমার পিতৃপুরুষের ধর্ম, যারা এটাকে অস্বীকার করে, তারা দ্বীনকে অস্বীকার করে”। (মাযহাব শীয়া ইমামিয়্যাহ: ২/৮০৬-৮০৭)।
উল্লেখিত দুইটি মতের মধ্যে বিশেষ কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়:
(ক) আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত ‘তাকিয়া’ কে প্রয়োজনের সময় প্রয়োজন পরিমাণ জায়েজ মনে করেন, প্রয়োজন কেটে গেলে তা আর জায়েজ থাকে না। অপরদিকে ‘রাফিযী’ সম্প্রদায় এটাকে দ্বীনের মৌলিক বিষয় ধরে সর্বক্ষণিক আমল করাকে ওয়াজিব মনে করেন।
(খ) আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত ‘তাকিয়া’র উপর আমলকে ‘রুখসাত’ এবং এর উপর আমল না করাকে ‘আযীমাত’ মনে করেন। আর এ ক্ষেত্রে আযীমাত এর উপর আমল করা উত্তম। অপরদিকে ‘রাফিযী’ সম্প্রদায় এটাকে দ্বীনের রুকন মনে করে থাকেন, যার অস্বীকারকারী দ্বীন থেকে খারিজ হয়ে যায়।
(গ) আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত মনে করেন, ‘তাকিয়া’ কেবল কাফিরদের বিরুদ্ধে সম্পাদন করা যাবে। অপরদিকে ‘রাফিযী’ সম্প্রদায় এটাকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে থাকেন। (ইসলাম সুয়াল-জাওয়াব পেইজ থেকে) ।
৪। মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক স্বার্থ রক্ষার জন্য কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করা জায়েজ নেই। ‘হাতিব ইবনু আবি বালতা’ নামক সাহাবী তার পারিবারিক স্বার্থ রক্ষার জন্য ‘জুয়াইনা’ নামক মহিলার মাধ্যমে মক্কার মুশরিকদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে মুসলিম উম্মাহর গোপন কিছু বিষয় জানাতে চাইলে আল্লাহ তায়ালা তাৎক্ষণিক জিবরীল (আ.) এর মাধ্যমে এ বিষয় রাসূলুল্লাহ (সা.) কে অবগত করালে তিনি আলী, আবু মারসাদ এবং যুবায়ের ইবনু আওয়াম (রা.) কে পাঠিয়ে ‘রাওদাতু খাখ’ নামক জায়গা থেকে ঐ মহিলাকে আটক করে নিয়ে আসেন। এ বিষয়ে লম্বা একটি হাদীস সহীহ বুখারীর (৩০০৭) এবং সহীহ মুসলিমের (১৬১) নাম্বারে বর্ণিত হয়েছে। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩/২০২) ।
৫। কোরআন কারীমের মোট সাতটি আয়াতে (সূরা আলে-ইমরান: ২৮, ১১৮/ সূরা নেসা: ১৪৪/ সূরা মায়িদা: ৫১/ সূরা আনফাল: ৭৩/ সূরা মুযাদালাহ: ২২/ সূরা মুমতাহেনা: ১) কাফিরদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু বা অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। ইমাম ওয়হাবা জুহাইলী (র.) বলেছেন: নিম্নের বিষয়গুলো উল্লেখিত আয়াতাবলীতে প্রদত্ব নিষেধের আওতায় পড়বে না:
(ক) জনকল্যানের স্বার্থে মুসলিম ও কাফিরের মধ্যে সন্ধি-চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়া; কারণ বনী খুজায়া মুশরিক থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের সাথে সন্ধি-চুক্তি করেছিলেন।
(খ) স্বাভাবিক অবস্থায় অমুসলিমদের সাথে প্রতিবেশী হিসেবে সৌজন্যবোধ বা বন্ধুসুলভ আচরণ করা।
(গ) স্বাভাবিক অবস্থায় ব্যক্তিগত পর্যায়ে অমুসলিমদের সাথে এমন বিষয়ে বন্ধুত্ব করা, মুসলিম উম্মাহের বৃহৎ স্বার্থের সাথে যার সংশ্লিষ্টতা নেই। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩/২০৩) ।
(ঘ) দাওয়াতের উদ্দেশ্যে অমুসলিমের সাথে বন্ধুত্ব করা।
আয়াতাবলীর আমল:
(ক) কাফিরদের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা, মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদেরকে সহযোগিতা এবং তাদের আক্বীদা-বিশ্বাসের প্রতি সমর্থন প্রদান পূর্বক তাদেরকে বন্ধু না বানানো।
(খ) কাফেরদের ক্ষতি এড়াতে তাদের সাথে সৌজন্যবোধ বা বন্ধুসুলভ আচরণ করা।
(গ) সামাজিক বিশৃঙ্খলা এড়াতে প্রতিবেশী কাফেরদের সাথে প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করা।