إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ النَّبِيِّينَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَيَقْتُلُونَ الَّذِينَ يَأْمُرُونَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ (21) أُولَئِكَ الَّذِينَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمَا لَهُمْ مِنْ نَاصِرِينَ (22)﴾ [سورة آل عمران: 21-22]
আয়াতদ্বয়ের আলোচ্যবিষয়: নবী-রাসূল ও আলেম-ওলামাদের প্রতি যুলমের পরিণতি।
আয়াতদ্বয়ের সরল অনুবাদ:
২১। নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতাবলীর সাথে কুফরী করে এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, এবং তাদেরকে হত্যা করে, মানুষের মধ্য থেকে যারা ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দেয়; আপনি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দিন।
২২। ওরাই হলো তারা, যাদের আমলসমূহ নিষ্ফল হয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে এবং তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।
আয়াতদ্বয়ের ভাবার্থ:
নিশ্চয় যারা মহাজাগতিক এবং প্রেরিত আয়াতকে অস্বীকার করে এবং তাদের হিদায়াতের জন্য প্রেরিত নবী-রাসূলদেরকে অন্যায়ভাবে অত্যাচারপূর্বক হত্যা করে, এমনকি মানুষের মধ্য থেকে যে সকল ওলামায়ে কেরাম তাদেরকে ন্যায়পরায়ণতার দিকে আহবান করে তাদেরকেও ভৎসনা ও হত্যা করে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূলের (সা.) মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাদের জন্য তিনটি ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে:
(ক) তাদের জন্য জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
(খ) তাদের কৃত সৎআমলগুলো বাতিল হয়ে যাবে।
(গ) যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করার জন্য আখেরাতে কোন সাহায্যকারী পাবে না। (আইসার আল-তাফসীর: ১/২৯৯-৩০০, আল-তাফসীর আল-মুয়াস্সার: ১/৫২, আল-মোন্তাখাব: ১/৮৭) ।
আয়াতদ্বয়ের অস্পষ্ট শব্দের ব্যাখ্যা:
﴿الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ النَّبِيِّينَ﴾ “যারা আল্লাহর আয়াতাবলীকে অস্বীকার করে এবং নবীদেরকে হত্যা করে”, আয়াতাংশে ‘যারা’ দ্বারা কাদেরকে বুঝানো হয়েছে? এ ব্যাপারে কয়েকটি মত পাওয়া যায়:
(ক) ইমাম বায়দাভী (র.) বলেন: পূর্ববর্তী যুগের ও রাসূলুল্লাহর (সা.) সমসাময়ীক আহলে কিতাবকে বুঝানো হয়েছে, যারা পূর্ববর্তী অনেক নবীকে হত্যা করেছে এবং রাসূলুল্লাহকে (সা.) হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছে। (তাফসীর আল-বায়দাভী: ২/১০) ।
(খ) ইমাম নাসাফী (র.) বলেন: সকল আহলে কিতাবকে বুঝানো হয়েছে। (তাফসীর আল-নাসাফী: ১/২৪৪) ।
(গ) ইমাম মারাগী (র.) বলেন: ইহুদীদেরকে বুঝানো হয়েছে। (তাফসীর আল-মারাগী: ৩/১২২) ।
উল্লেখিত অভিমতগুলোকে সমন্বয় করে বলা যায়, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল কাফের মুশরিকদেরেকে ব্যাপকভাবে বুঝানো হয়েছে, যারা পূর্বে নবী-রাসূল ও তাদের অনুসারীদেরকে হত্যা করেছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা এ চরিত্রের অধিকারী হবে; কারণ আয়াতে দুইটি বিষয় পরিলক্ষিত হয়:
(ক) আয়াতে ‘আল্লাযিনা’ তথা ‘যারা’ শব্দটি ব্যাপক অর্থের ফায়দা দেয়।
(খ) আয়াতে ‘ফিল আল-মুদারি’ তথা ‘বর্তমান ও ভবিষ্যত সূচক ক্রিয়া’ ব্যবহার করা হয়েছে, যা ‘দাওয়াম’ তথা ‘সর্বদা সংগঠিত হওয়ার’ ফায়দা দেয়। (আল্লাহই ভালো জানেন) ।
উল্লেখিত আয়াতদ্বয়ের সাথে পূর্বের আয়াতাবলীর সম্পর্ক:
(১৯-২০) নাম্বার আয়াতে রাসূলুল্লাহর (সা.) সমসাময়ীক ইহুদীদের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে, যারা তার প্রতি হিংসার কারণে ইসলাম নিয়ে মতবিরোধ করতো এবং তার সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হতো। আর অত্র আয়াতদ্বয়ে, তাদের এবং তাদের পিতৃপুরুষ ইহুদীদের হিং¯্র চরিত্র ও তার ভয়াবহ পরিণতি তুলে ধরা হয়েছে। তারা রাসূলুল্লাহকে (সা.) হত্যার চেষ্টা করেছিল আর তাদের পিতৃপুরুষ ইহুদীরা তৎকালীন নবী-রাসূলদেরকে হত্যা করতো। সুতরাং উল্লেখিত আয়াতদ্বয়ের সাথে পূর্বের আয়াতের সম্পর্ক স্পষ্ট। (তাফসীর আল-মারাগী: ১২২-১২৩) ।
(২১-২২) নাম্বার আয়াতসংশ্লিষ্ট ঘটনা:
আবু আব্বাস আল-মুবাররাদ (র.) বলেন: বনী ইসরাইলদের কাছে নবী-রাসূল আসলে, তারা তদের প্রতি অত্যাচার করে হত্যা করতো; এমনকি তাদের মধ্য থেকে কেউ তাদেরকে নসীহত করলে তাদেরকেও হত্যা করা হতো। অত্র আয়াতদ্বয়ে এ ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে।
আবু উবায়দা ইবন আল-জাররাহ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: বনী ইসরাইলরা ৪৩ জন নবী-রাসূলদেরকে দিনের দ্বিপ্রহরের পূর্বে এক ঘন্টার ব্যাবধানে হত্যা করেছিল। অতঃপর তাদের নিজেদের মধ্য থেকে একদল তাদেরকে ভালো কাজের আদেশ করলে, তাদের মধ্য থেকে ১১২ জনকে দিনের শেষ প্রহরে হত্যা করেছিল। অত্র আয়াতদ্বয়ে এ ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। (তফসীর আল-কুরতুবী: ৪/৪৬, তাফসীর আল-মুনীর: ৩/১৮৪)।
আয়াতদ্বয়ের শিক্ষা:
১। উল্লেখিত আয়াতদ্বয়ে তিনটি গুণের মানুষের জন্য তিন প্রকার শাস্তির বর্ণনা রয়েছে। তিনটি গুণের মানুষ হলো:
(ক) যারা আল্লাহর মহাজাগতিক ও প্রেরিত আয়াতাবলীকে অস্বীকার করে।
(খ) যারা নবী-রাসূলদেরকে গালমন্দ ও হত্যা করে।
(গ) হক্কানী ওলামায়ে কেরামকে (যারা মানুষকে সৎকাজের আদেশ করে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে) গালমন্দ ও হত্যা করে।
এবং উল্লেখিত তিনটি গুণের যেকোন একটি গুণ কারো মধ্যে পাওয়া গেলে তার জন্য নি¤েœর তিনটি শাস্তি অবধারিত:
(ক) তাদের জন্য জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
(খ) তাদের সৎআমল দুনিয়া ও আখেরাতে বরবাদ হয়ে যাবে।
(গ) জাহান্নাম থেকে বাচানোর জন্য কোন সাহায্যকারী পাবে না। (তাফসীর আল-মুনীর, ওয়াহাবা আল-জুহাইলী: ৩/১৮৬-১৮৭) ।
২। একুশ নাম্বার আয়াতে ‘আল্লাহর আয়াতাবলী’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো:
(ক) আল্লাহর ‘মহাজাগতিক নিদর্শন’ অর্থাৎ: সৃষ্টি জগতের বিচিত্র সৃষ্টি।
(খ) কোরআনে বর্ণিত আল্লাহর আয়াতাবলী। (আল-মোন্তাখাব, ওলামায়ে আযহার: ১/৮৭)।
ইমাম মওদুদী (র.) প্রথম প্রকার আয়াতকে আল্লাহর প্রাক্টিক্যাল বা ব্যবহারিক নিদর্শন বলেছেন এবং দ্বিতীয় প্রকারকে আল্লাহর থিওরিক্যাল বা তাত্বিক নিদর্শন বলেছেন।
আয়াতে বর্ণিত ‘আয়াাত’ শব্দটি বহুবচন এবং ব্যাপকভাবে বর্ণিত হওয়ার কারণে বলা যায়: উল্লেখিত দুই প্রকার আল্লাহর আয়াতের যেকোন একটিকে কেউ অস্বীকার করলে, সে কাফির হয়ে যাবে। (আল্লাহই ভালো জানেন) ।
৩। একুশ নাম্বার আয়াতে ‘তারা নবীদেরকে হত্যা করেছে’, একই অর্থে সূরা বাক্বারা এর ৬১ ও ৮৭ নাম্বার আয়াত এবং সূরা আলে ইমরান এর ২১ নাম্বার আয়াত এসেছে। বনুইসরাঈলরা কতজন নবীকে হত্যা করেছে? এ ব্যাপারে ৪৩ জনের একটি সংখ্যা বিভিন্ন হাদীসে পাওয়া গেলেও তারা যেসকল নবী-রাসূলদেরকে হত্যা করেছে, তাদের নামের কোন তালিকা পাওয়া যায় না, তবে তাফসীরকারকগণ কয়েকজন নবীর নাম উল্লেখ করেছেন। ইমাম বায়যাভী (র.) তার তাফসীর গ্রন্থে বলেন: বনুইসরাঈলরা যাকারিয়া (আ.) এবং ইয়াহইয়া (আ.) কে হত্যা করেছে। (তাফসীর আল-বায়যাভী: ১/৯৩) ।
৪। একুশ নাম্বার আয়াতে আরো বলা হয়েছে: ‘তারা অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে’, এখন প্রশ্ন হতে পারে, এ আয়াতাংশ দ্বারা বুঝা যায় নবীদেরকে হত্যা করার ন্যায্য কোন রুপ আছে। তাহলে আয়াতাংশ দ্বারা কি উদ্দেশ্য করা হয়েছে?
ইমাম নাসাফী (র.) বলেন: এখানে আয়াতাংশ দ্বারা তাদের অন্যায় কর্মের ভয়াবহতার উপর তাগিদ দিয়েছেন। অর্থাৎ নবী-রাসূলদেরকে হত্যা করাটাইতো অন্যায়, পুণরায় আবার ‘অন্যায়ভাবে’ শব্দটি যোগ করে তারা অন্যায়ের চুড়ান্ত সীমা অতিক্রম করেছে তার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। (তাফসীর আল-নাসাফী: ১/২৪৪) ।
৫। একুশ নাম্বার আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে: যারা মানুষকে ন্যায়পরাণতার আদেশ দিতো, তাদেরকেও ইহুদীরা হত্যা করেছিল। ন্যায়পরায়ণতার দিকে আদেশ করা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: ‘সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা’, যা সকল যুগের উম্মতের উপর ওয়াজিব ছিল এবং বর্তমানে উম্মতে মোহাম্মাদীর উপরেও ওয়াজিব। দুইটি কারণে এর গুরুত্ব বেড়েছে:
(ক) এর মাধ্যমে নুবুয়াতের প্রতিনিধিত্ব হয়, যেমন: ওবাদা ইবনু সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“مَنْ أَمَرَ بِالْمَعْرُوْفِ أَوْ نَهَى عَنِ الْمُنْكَرِ، فَهُوَ خَلِيْفَةُ اللهِ فِيْ أَرْضِهِ، وَخَلِيْفَةُ رَسُوْلِهِ، وَخَلِيْفَةُ كِتَابِهِ” (السلسلة الضعيفة للألباني: ৪৮৪০).
অর্থাৎ: “যে ব্যক্তি সৎকাজের আদেশ করে অথবা অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে, সে আল্লাহর যমীনে তাঁর খলীফা, তাঁর রাসূলের (সা.) খলীফা এবং তাঁর কিতাবের খলীফা” (আল-সিলসিলা আল-যয়ীফা, নাসিরুদ্দীন আলবানী: ৪৮৪০) । হাদীসের মান যয়ীফ।
(খ) ‘সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ’ মুমিন ও মুনাফিকের মধ্যে পার্থক্য করার মানদন্ড; কারণ মুমিন সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে, অপরদিকে মুনাফিক সৎকাজ থেকে নিষেধ করে এবং অসৎকাজের আদেশ করে। এ সম্পর্কে সূরা তাওবা এর ৬৭ এবং ৭১ নাম্বার আয়াতে বর্ণনা এসেছে।
(গ) মুসলিম জাতি সর্বোত্তম হওয়ার মূল ভিত্তি হলো: ‘সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ’। সূরা আলে-ইমরান এর ১১০ নাম্বার আয়াতে এসেছে:
﴿كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ﴾ [سورة آل عمران: ১১০].
অর্থাৎ: “তোমরা হচ্ছো সর্বোত্তম জাতি, সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের জন্যেই তোমাদেরকে বের করে আনা হয়েছে। তোমাদের দায়িত্ব হলো: তোমরা মানুষকে সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎকাজ থেকে বিরত রাখবে” (সূরা আলে-ইমরান: ১১০) ।
উল্লেখ্য যে, ‘সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ’ এর ক্ষেত্রে দু’টি বিষয় লক্ষনীয়:
(ক) ‘সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ’ এর ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে ন্যায়পরায়ণকারী হওয়া শর্ত নয়, বরং এ দায়িত্ব ব্যাপকভাবে সবার জন্য প্রযোজ্য হবে।
(খ) মানুষ তার জ্ঞানগত ও সামাজিক সক্ষমতা অনুযায়ী সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। যার প্রশাসনিক ক্ষমতা আছে, সে তা ব্যবহার করে এ কাজের আঞ্জাম দিবে। যার প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই, কিন্তু মুখ দিয়ে দাওয়াত দিয়ে টিকে থাকার মতো সক্ষমতা রয়েছে, সে আলোচনা সভা, সেমিনার, কনফারেন্স ইত্যাদির মাধ্যমে এ মহৎকাজের আঞ্জাম দিবে। আর যার উপরের দুইটির কোনটার সক্ষমতা নেই, সে মনে মনে ঘৃণা করবে এবং পরিবর্তনের জন্য পরিকল্পনা করবে। আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ” (صحيح مسلم: ১৮৬).
অর্থাৎ: “তোমাদের কেউ খারাব কাজ সংগঠিত হতে দেখলে সে যেন তা তার হাত দিয়ে প্রতিহত করে; যদি হাত দিয়ে প্রতিহত করতে সক্ষম না হয়, তাহলে যেন নসীহত করার মাধ্যমে তা প্রতিহত করে; যদি নসিহত করার মতো পরিস্থিতি না থাকে, তাহলে তা অন্তরে ঘৃণা করে পরিবর্তনের পরিকল্পনা করবে। তৃতীয় নাম্বারটি হলো ঈমানের দুর্বল স্তর”। (সহীহ মুসলিম: ১৮৬) । ওয়হাবা আল-জুহাইলী তার তাফসীর গ্রন্থে বলেন: এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ওলামায়ে কেরাম বলেন: কোন অপরাধ সংগঠিত হতে দেখলে প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ হাত দিয়ে প্রতিহত করবে, ওলামায়ে কেরাম প্রতিহত করবে নসিহত করার মাধ্যমে এবং সাধারণ দুর্বল মানুষ তা অন্তর থেকে ঘৃণা করবে। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩/১৮৬) ।
৬। বর্তমান প্রেক্ষাপটে উল্লেখিত আয়াতদ্বয়ের মৌলিক শিক্ষা হলো: যারা নবী-রাসূল এবং ওলামায়ে কেরামকে গালমন্দ ও হত্যা করে, তাদের জন্য ভয়াবহ তিন প্রকার শাস্তি অবধারিত রেখেছেন। এজন্য আমাদেরকে খুব বেশী সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, আমরা যেন নি¤েœর যে কোন একটি দলের অন্তর্ভূক্ত না হই।
(ক) মুসলিম নামধারী নাস্তিক, যারা সর্বদা নবী-রাসূল ও বর্তমান সময়ের অহীর ধারকবাহক ওলামায়ে কেরামের পিছনে লেগে থাকে। একটু সুযোগ পেলেই তাদেরকে ঘায়েল করতে আর বিলম্ব করে না।
(খ) কিছু মডার্ণ মুসলিম, যারা আলেমদের আচার-আচরণ ও চালচলনকে বর্তমান সময়ের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করার কারণে তাদেরকে নিয়ে উপহাস করে থাকে।
(গ) ইসলাম বিদ্বেষী একটি বিশাল অংশ, যারা সর্বদা রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং আলেম-ওলামাদেরকে নিয়ে কটাক্ষ করতে সোচ্চার থাকে। (আল্লাহই ভালো জানেন) ।
আয়াতদ্বয়ের আমল:
(ক) নবী-রাসূলদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা এবং ওলামায়ে কেরামকে যথাযোগ্য সম্মান ও তাদের সাথে ভালো আচরণ করা।
(খ) সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা।