Skip to main content

সূরা আলে-ইমরানের চৌদ্দ নাম্বার আয়াতের তাফসীর, আলোচ্য বিষয়: পৃথিবীর লোভনীয় বস্তুর প্রতি মানুষের স্বভাবজাত ভালোবাসা একটি পরীক্ষা।

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنْطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ذَلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاللَّهُ عِنْدَهُ حُسْنُ الْمَآبِ (১৪) [سورة آل عمران: ১৪].

আয়াতের আলোচ্যবিষয়:
পৃথিবীর লোভনীয় বস্তুর প্রতি মানুষের স্বভাবজাত ভালোবাসা একটি পরীক্ষা।

আয়াতের সরল অনুবাদ ও শব্দার্থ:
সুশোভিত করা হয়েছে মানুষের নিকট লোভনীয় বস্তুসমূহের প্রতি ভালোবাসাকে: নারী, সন্তানসন্ততি, রাশি রাশি সোনা-রুপা, চিহ্ণিত ঘোড়া, চতুষ্পদ জন্তু এবং শস্যক্ষেত; এগুলো ভোগসামগ্রী পার্থিব জীবনের; আল্লাহ তায়ালার নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল।

আয়াতের ভাবার্থ:
নিশ্চয় মানবজাতিকে পরীক্ষা করার জন্য সৃষ্টিগতভাবে ৬টি লোভনীয় বস্তুর প্রতি আসক্ত করে সৃষ্টি করা হয়েছে: (ক) নারী, (খ) সন্তানসন্ততি, (গ) রাশি রাশি সোনা-রূপা, (ঘ) পছন্দসই চিহ্ণিত ঘোড়া, (ঙ) গবাদি পশু, যেমন: উট, গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি এবং (চ) শস্যক্ষেত। এ লোভনীয় বস্তুগুলো আখেরাতে কারো কোন উপকার করতে পারবে না, যদি তার মধ্যে ঈমান, সৎআমল, শীরক-কুফরীর প্রতি ঘৃণা এবং উল্লেখিত বস্তুগুলোকে ব্যবহার করার ইলাহী বিধান জানা না থাকে। এ জন্যই আল্লাহ তায়ালা সতর্ক করে বলেছেন: কিন্তু এগুলো ক্ষণিকের এ দুনিয়ার ভোগ্যসামগ্রী মাত্র, যা মৃত্যুর সাথে সাথে ভোগকারীর জীবন থেকে নিঃশেষ হয়ে যাবে, আর আল্লাহর নিকট রয়েছে স্থায়ী জান্নাতের উত্তম ভোগসমগ্রী। (তাফসীর আল-কাশশাফ: ১/৩৪২, আল-মুন্তাখাব: ১/৮৫, আল-মুয়াসসার: ১/৫১, আইসার আল-তাফাসীর, আল-জাযায়িরী: ১/২৯২) ।

আয়াতের অস্পষ্ট শব্দের ব্যাখ্যা:
(الشَّهَوَاتِ) ‘লোভ-লালসা’, সকল তাফসীরের ভাষ্যমতে অত্র আয়াতে ‘লোভ-লালসা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: ‘লোভনীয় বস্তুসমূহ’। এখানে শব্দমূল ব্যবহার করে ঐ শব্দের অর্থটি যে সকল বস্তুর সাথে প্রযোজ্য হয় তা উদ্দেশ্য করা হয়েছে। এ রকম ব্যবহার আরবী ভাষায় সচরাচর পাওয়া যায়। যেমন: ‘পান করা’ শব্দ ব্যবহার করে পানোপযুক্ত সকল বস্তুকে বুঝানো হয়।
ইমাম জমাখশারী (র.) আরবী ভাষায় এ রকম ব্যবহারের উপকারিতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: এতে অর্থের আধিক্যতার প্রতি ইঙ্গিত আছে। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, শাহওয়াত বা লোভ-লালসা বেশী থাকা পশুর গুণ। মানুষ যখন আয়াতে উল্লেখিত ছয়টি বস্তুর প্রতি বেশী আসক্ত হয়, তখন সে পশুর পর্যায় নেমে যায়। সুতরাং আয়াতে এ শব্দ ব্যবহার করে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। (তাফসীর আল-কাশশাফ: ১/৩৪২) ।
(الْقَنَاطِيرِ الْمُقَنْطَرَةِ) ‘আল-ক্বানাতীরুল মুক্বানতারা’, ‘আল-ক্বানাতীর’ আরবী ভাষার বহুবচনের শব্দ, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: রাশি রাশি সম্পদ। এর এক বচনের শব্দ হলো: ‘ক্বিনতার’। এর পরিমাণ নিয়ে অনেক মতামত পাওয়া যায়। ইমাম জাযায়িরী (র.) তার তাফসীর গ্রন্থে একটি মত দিয়েছেন, তা হলো: এক ক্বিনতার হলো: ১১০০ আওক্বিয়া রুপা। আর ‘আল-মুক্বানতারা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো অঢেল বা রাশি রাশি। (আইসার আল-তাফাসীর: ১/২৯২) ।
বর্তমান প্রচলিত পরিমাপে এর ওজন দাড়ায় প্রায় ১৩১ কেজি রুপা। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১০ কোটি ৬১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। আর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ‘ক্বিনতার’ এর বহুবচনের রুপ ব্যবহার করে রাশি রাশি সম্পদের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। (আল্লাহ ভালো জানেন)
(مَتَاعُ) ‘ভোগ্যসামগ্রী’, দুনিয়ার উপভোগ্য বস্তুর ক্ষেত্রে আরবী ভাষায় এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়; কারণ এর অর্থের মধ্যে হারিয়ে ফেলা বা আলাদা হওয়ার একটি অর্থ রয়েছে, অর্থাৎ দুনিয়ার ভোগ্য সামগ্রীকে ভোগকারী যে কোন মুহুর্তে হারিয়ে ফেলতে পারে। হয়তো ভোগসামগ্রী ভোগকারী থেকে আলাদা হওয়ার মাধ্যমে, নয়তো ভোগকারী তার ভোগসামগ্রী থেকে আলাদা হওয়ার মাধ্যমে পৃথক হয়ে যাবে। (তাফসীর গরীব আল-কোরআন, কাওয়ারী: ৩/১৪) ।

আয়াতের সাথে পূর্বের আয়াতের সম্পর্ক:
পূর্বের আয়াতাবলী তথা (১০-১৩) নাম্বার আয়াতে দুনিয়ার ধনসম্পদ, সন্তানসন্তুত এবং ভোগসামগ্রীর মোহে পড়ে আখেরাত থেকে বিমুখ হওয়ার পরিণতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আর অত্র আয়াতে দুনিয়ার ছয়টি অতি লোভনীয় বস্তুর উল্লেখপূর্বক মানবজাতিকে সতর্ক করা হয়েছে যে অতি মোহের কারণে উল্লেখিত বস্তুর ভালোবাসার জালে যেন কেউ আটকিয়ে না যায় এবং স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে দুনিয়ার ভোগবিলাসিতার চেয়ে আখেরাতের সফলতাই একজন মানুষের মুখ্য বিষয় হওয়া উচিৎ। সুতরাং পূর্বের আয়াতাবলীর সাথে অত্র আয়াতের সম্পর্ক স্পষ্ট। (তাফসীর আল-মারাগী: ৩/১০৮) ।
পূর্বের আয়াতাবলীতে দুনিয়ার মোহে আসক্ত হওয়ার পরিণতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, আর অত্র আয়াতে দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হওয়ার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। (তাফসীর আল-মুনীর, ওয়াহাব জুহাইলী: ৩/১৬৪) ।

আয়াত সংশ্লিষ্ট ঘটনা:
ইমাম ফখরুদ্দীন আল-রাজী (র.) অত্র আয়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট দুইটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন:
(ক) আবু হারেসা ইবনু আলক্বামাহ নামক খৃষ্টান তার ভাইয়ের ইসলাম গ্রহণের সংবাদ পেয়ে রোম স¤্রাট তাদের সকল সুযোগ-সুবিধা ও সহায়সম্পত্তি ছিনিয়ে নেয়ার ভয়ে তাকে ইসলাম থেকে ফিরে আসতে বাধ্য করে। এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে সহ বিশ্বমানবতাকে সতর্ক করেছেন।
(খ) বদরের যুদ্ধের পর রাসূলুল্লাহ (সা.) মদীনার ইহুদিদেরকে সতর্ক করে দিলে তারা তাদের ধনসম্পদ, জনশক্তি এবং ক্ষমতার দাম্ভিকতা করে রাসূলুল্লাহ (সা.) ও মুসলমানদেরকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিল। অত্র আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে সহ সকল মানবজাতিকে শিক্ষা দিয়েছেন। (আল-তাফসীর আল-কাবীর, রাযী: ৭/১৫৯) ।

আয়াতের শিক্ষা:
১। এখানে একটি প্রশ্ন হতে পারে, মানুষের ভালোবাসাকে সরাসরি ছয় বস্তুর দিকে সম্বন্ধ করে “মানুষকে সৃষ্টিগতভাবে নারী, সন্তানসন্তুত, রাশি রাশি সম্পদ, ইত্যাদির ভালোবাসায় সজ্জিত করা হয়েছে” না বলে ‘ভালোবাসা’ ও ছয়টি বস্তুর মধ্যে একটি ‘শাহওয়াত’ বা কামনাবাসনা শব্দটিকে যোগ করে “মানুষকে সৃষ্টিগতভাবে নারী, সন্তানসন্তুত, রাশি রাশি সম্পদ ইত্যাদির প্রতি কামনাবাসনার ভালোবাসায় সজ্জিত করা হয়েছে” বলার কারণ কি?
এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, উল্লেখিত ছয়টি বস্তুকে ভালোবাসা দোষের নয়, বরং প্রশংসনীয়। অপরদিকে এগুলোর প্রতি অতিমাত্রায় আশক্ত হওয়া দোষের। এজন্য আল্লাহ তায়ালা প্রথম পদ্ধতি অবলম্বন না করে দ্বিতীয় পদ্ধতি অবলম্বন করার মাধ্যমে মানবজাতিকে ছয়টি বস্তুর প্রতি এ ধরণের অতিমাত্রায় আসক্ত হওয়া থেকে সতর্ক করেছেন। (তাফসীর গরীব আল-কোরআন, কাওয়ারী: ৩/১৪) ।

২। মানবজাতিকে ছয়টি লোভনীয় বস্তুর প্রতি আসক্ত করে সজ্জিত করা হয়েছে, এখন প্রশ্ন হলো: কে সজ্জিত করেছেন, আল্লাহ নাকি শয়তান?
এ আয়াতাংশের সাথে আক্বীদার বিষয় সম্পৃক্ত। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত মনে করেন, প্রথিবীর ভালোমন্দ সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ, এমনকি মানুষের ভালোমন্দ সকল কর্মেরও সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা।
অপরদিকে মোতাজিলা সম্প্রদায় মনে করেন, ভালো জিনিস ও কর্মের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ, আর মন্দ জিনিষ ও কর্মের সৃষ্টিকর্তা শয়তান। তারা আরো বলেন, মানুষ তার কর্মের সৃষ্টিকর্তা।
এখন প্রশ্নের উত্তরে ফিরে যাওয়া যাক, প্রায় সকল তাফসীর গ্রন্থে বলা হয়েছে, আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে, আল্লাহ তায়ালা পরীক্ষার জন্য সৃষ্টিগতভাবে মানবজাতিকে ছয়টি লোভনীয় বস্তুর প্রতি আসক্ত করে তৈরি করেছেন। যেমন: অন্য একটি আয়াতে এসেছে:
(إِنَّا جَعَلْنا ما عَلَى الْأَرْضِ زِينَةً لَها لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا) [سورة الكهف: ৭].
অর্থাৎ: “যা কিছু যমীনের বুকে আছে আমি তাকে অবশ্যই তার জন্যে শোভা বর্ধনকারী বানিয়েছি, যাতে তাদের আমি পরীক্ষা করতে পারি যে, তাদের কাজকর্মের দিক থেকে কে বেশী উত্তম” (সূরা কাহ্ফ: ৭) । অন্য আরেকটি আয়াতে এসেছে:
(كَذلِكَ زَيَّنَّا لِكُلِّ أُمَّةٍ عَمَلَهُمْ) [سورة الأنعام: ১০৮].
অর্থাৎ: “এভাবে আমি প্রত্যেক জাতির কাছে তাদের নিজেদের কার্যকলাপ সুশোভন করে রেখেছি” (সূরা আনয়াম: ১০৮) ।
আর শয়তান মানবজাতিকে পথভ্রষ্ট করার জন্য উল্লেখিত ছয়টি বস্তুকে মানুষের সামনে সজ্জিত করে উপস্থাপন করে। যেমন: কোরআনের একটি আয়াতে এসেছে:
(وَإِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ) [سورة الأنفال: ৪৮].
অর্থাৎ: “যখন শয়তান তাদের কাজগুলো তাদের সামনে খুব চাকচিক্যময় করে পেশ করেছিলো” (সূরা আনফাল: ৪৮) ।

৩। আয়াতের মৌলিক শিক্ষা হলো: কোন বস্তুকে ভালোবাসার দুইটি স্তর:
(ক) অপছন্দ করা সত্তেও কোন বস্তুকে ভালোবাসা। যেমন: একজন মুসলিম তার স্বভাবজাত কারণে কিছু হারাম বস্তুকে ভালোবাসে, কিন্তু সে খারাপ বস্তুটিকে ভালোবাসতে অপছন্দ করে। এ ধরণের ভালোবাসার জন্য কাউকে পাকড়াও করা হবে না।
(খ) কোন বস্তুকে পছন্দ করতে ভালোবাসা, যার ভিতর তিনটি স্তর একত্রে নিহীত থাকে: (ক) বস্তুকে ভালোবাসা, (খ) ঐ বস্তুর প্রতি কামনাবাসনাকে ভালোবাসা এবং (গ) এ ভালোবাসাকে কল্যানকর মনে করা। এটা ভালোবাসার চুড়ান্ত স্তর। এর দুইটি রুপ হতে পারে:
(র) বস্তুটির প্রতি কামনাবাসনার ভালোবাসা থাকাটা কল্যানকর, যেমন: সূরা স্বাদ এর ৩২ নাম্বার আয়াতে সোলাইমান (আ.) বলেছিলেন: আমি কল্যানকর বস্তুকে ভালোবাসতে পছন্দ করি। অর্থাৎ- আমি কল্যানকর বস্তুকে ভালো বাসি এবং সেটাকে ভালোবাসতে পছন্দ করি। এ ধরণের ভালোবাসা প্রশংসনীয়।
(রর) বস্তুটির প্রতি কামনাবাসনার ভালোবাসা থাকা অকল্যানকর, যেমন: সূরা আলে ইমরানের ১৪ নাম্বার আয়াতে যে ছয়টি বস্তুর কথা বলা হয়েছে। মানুষ যখন এ জাতিয় বস্তুর প্রতি এ পর্যায়ের ভালোবাসায় উপনিত হয়, তখন সে আল্লাহর একান্ত দয়া ছাড়া সেখান থেকে ফিরে আসতে পারে না। এ ধরণের ভালোবাসা নিন্দনীয়। (আল-তাফসীর আল-কাবীর, রাযী: ৭/১৬১) ।

৪। এখন একটি প্রশ্ন হতে পারে, আয়াতে বর্ণিত ছয়টি লোভনীয় বস্তুর প্রতি ভালোবাসা কখন বৈধ হয় এবং কখন অবৈধ হয়?
এ প্রশ্নের এক কথায় উত্তর হলো- যখন উল্লেখিত বস্তুকে অর্জন করার পিছনে নি¤েœর উদ্দেশ্যগুলো পাওয়া যাবে, তখন তার প্রতি ভালোবাসা বৈধ হবে:
(ক) দ্বীনের কাজে ব্যবহার করা।
(খ) এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।
(গ) অর্জিত হওয়ার পর তা শরিয়তের বিধান অনুযায়ী ব্যবহার করা।
এবং যখন উল্লেখিত বস্তুকে অর্জন করার পিছনে নি¤েœর উদ্দেশ্যগুলো পাওয়া যাবে, তখন তার প্রতি ভালোবাসা অবৈধ হবে:
(ক) দ্বীনের ক্ষতি সাধনের কাজে ব্যবহার করা।
(খ) এর মাধ্যমে দাম্ভিকতা পোষণ করা।
(গ) অর্জিত হওয়ার পর বেপড়োয়া হয়ে যাওয়া। (আল্লাহই ভালো জানেন) ।
উল্লেখিত প্রশ্নের বর্ণনামূলক উত্তর হলো:
নারী: প্রাপ্ত বয়স্কে উপণিত হওয়ার পর প্রত্যেক পুরুষের সব থেকে বেশী প্রয়োজন বোধ হয় একজন সঙ্গিনীর। নারীর প্রতি পুরুষের ভালোবাসা ইসলামী শরিয়তের বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলে তা বৈধ বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু শরয়ী বিধানকে পড়োয়া না করে তাদেরকে কেবল কামনাবাসনা, ভোগবিলাসিতা, যৌন চাহিদা, বেহায়াপনা ইত্যাদির জন্য ভালোবাসা হলে তা অবৈধ হবে।
সন্তানসন্ততি: মুসলিম জনশক্তি বৃদ্ধি, প্রজনন ধারা অব্যাহত রাখা, দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত করা, আল্লাহর পথের সৈনিক হিসেবে গড়ে তোলা, জনসেবায় পেশ করা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে তাদেরকে ভালোবাসা প্রশংসনীয়। কিন্তু পৃথিবীতে ক্ষমতা বাড়ানোর নেশা, ইসলাম বিরোধী জনশক্তি বৃদ্ধি, দাম্ভিকতা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে তাদেরকে ভালোবাসা নিন্দনীয়।
ধনসম্পদ: জীবন ধারণ করা, আত্মীয়দের সহযোগিতা করা, দানসদকা করা, দ্বীনের পথে ব্যয় করা, অন্যের কাছে হাত পাতা থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে ধনসম্পদকে ভালোবাসা প্রশংসনীয়। কিন্তু দাম্ভিকতা, ইসলাম বিরোধী শক্তিকে শক্তিশালী করা, কেবল দুনিয়া নিয়ে মত্ত থাকা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে ধনসম্পদকে ভালোবাসা অবৈধ।
ঘোড়া: আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং জিহাদের প্রস্তুতির জন্য ঘোড়াকে ভালোবাসা প্রশংসনীয়, কিন্তু দাম্ভিকতার জন্য ভালোবাসা নিন্দনীয়।
চতুষ্পদ জন্তু: চাষাবাদ করা, বোঝা বহণের কাজ নেওয়া, জমি থেকে ফসলাদি উৎপন্ন করা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে চতুষ্পদ জন্তুকে ভালোবাসা প্রশংসনীয়। কিন্তু কেবল দুনিয়া অর্জন, দাম্ভিকতা, আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন হয়ে সুখ-স¦াচ্ছন্দ্যের জীবন নিয়ে মেতে থাকা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে চতুষ্পদ জন্তুকে ভালোবাসা নিন্দনীয়।
শস্যক্ষেত: অন্যকে উপকার করার জন্য চাষাবাদ করার উদ্দেশ্যে শস্যক্ষেতকে ভালোবাসা প্রশংসনীয়। কিন্তু কেবল দুনিয়া অর্জন, দাম্ভিকতা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে শস্যক্ষেতকে ভালোবাসা নিন্দনীয়। (তাফসীর আল-মুনীর, ওয়াহাবা জুহাইলী: ৩/১৬৬-১৬৮) ।
উল্লেখিত আয়াতে, মূলত ছয়টি লোভনীয় বস্তুর কামনাবাসনায় মত্ত হয়ে মানুষ যেন আল্লাহ তায়ালাকে ভুলে গিয়ে কেবল দুনিয়া অর্জন, দাম্ভিকতা, ভোগবিলাসিতা ইত্যাদিতে জড়িয়ে না পড়ে, তা থেকে সতর্ক করা হয়েছে।

আয়াতের আমল:
ছয়টি লোভনীয় বস্তু: নারী, সন্তানসন্ততি, ধনসম্পদ, ঘোড়া, চতুষ্পদ জন্তু এবং শস্যক্ষেতকে কামনাবাসনার সাথে ভালোবাসা যাবে না। বরং কেবল দুনিয়া অর্জন এবং দাম্ভিকতাকে বাদ দিয়ে কেবল জীবন জীবিকার তাকিদে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এগুলোকে ভালোবাসা।

Leave a Reply

error: Content is protected !!