إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَنْ تُغْنِيَ عَنْهُمْ أَمْوَالُهُمْ وَلَا أَوْلَادُهُمْ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا وَأُولَئِكَ هُمْ وَقُودُ النَّارِ (10) كَدَأْبِ آلِ فِرْعَوْنَ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا فَأَخَذَهُمُ اللَّهُ بِذُنُوبِهِمْ وَاللَّهُ شَدِيدُ الْعِقَابِ (11) قُلْ لِلَّذِينَ كَفَرُوا سَتُغْلَبُونَ وَتُحْشَرُونَ إِلَى جَهَنَّمَ وَبِئْسَ الْمِهَادُ (12) قَدْ كَانَ لَكُمْ آيَةٌ فِي فِئَتَيْنِ الْتَقَتَا فِئَةٌ تُقَاتِلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَأُخْرَى كَافِرَةٌ يَرَوْنَهُمْ مِثْلَيْهِمْ رَأْيَ الْعَيْنِ وَاللَّهُ يُؤَيِّدُ بِنَصْرِهِ مَنْ يَشَاءُ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَعِبْرَةً لِأُولِي الْأَبْصَارِ (13) [سورة آل عمران: 10-13]
আয়াতের আলোচ্যবিষয়: ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি নিয়ে অহংকারী কাফিরদের পরিণতি।
আয়াতের সরল অনুবাদ ও শব্দার্থ:
১০। নিশ্চয় যারা কুফরী করে, তাদের মাল-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহর নিকট কোন কাজে আসবে না এবং তারাই দোযখের ইন্ধন হবে।
১১। ফিরআউনের বংশধরগণ এবং তাদের পূর্ববর্তীগণের মতো, যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যপ্রতিপন্ন করেছিল। অতঃপর তাদের পাপের কারণে আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও করেছিলেন। বস্তুত আল্লাহ শাস্তি প্রদানে অত্যন্ত কঠোর।
১২। হে আল্লাহর নবী! আপনি কাফিরদেরকে বলুন, তোমরা অচিরেই পরাজিত হবে এবং তোমাদেরকে জাহান্নামের দিকে সমবেত করা হবে। আর সেটি কতইনা নিকৃষ্ট আবাসস্থল।
১৩। নিশ্চয় তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে দুইটি দলের মধ্যে, যারা পরস্পর মুখোমুখি হয়েছিল। একটি দল লড়াই করছিল আল্লাহর পথে এবং অপর দলটি কাফির। তারা বাহ্যিক দৃষ্টিতে ওদেরকে নিজেদের দ্বিগুণ দেখছিল। আর আল্লাহ নিজ সাহায্য দ্বারা যাকে চান তাকে শক্তিশালী করেন। নিশ্চয় এতে রয়েছে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন লোকদের জন্য শিক্ষা।
আয়াতের ভাবার্থ:
নাজরানের খৃষ্টান, মদীনার ইহুদী এবং মক্কার মুশরিক সহ সাড়া দুনিয়ায় কিয়ামত পর্যন্ত যারা আগমণ করবে, তাদের সকলের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: নিশ্চয় যারা আল্লাহর একাত্ববাদকে অস্বীকার করে, তাদের মাল-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়া ও আখেরাতে কোথাও তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। যেমনিভাবে ফিরআউনের বংশধরগণ এবং তাদের পূর্ববর্তী আদ, সামূদ, কাওমে লূত ও আসহাবুল উখদূদ সহ অন্যান্য জাতি আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যপ্রতিপন্ন করে রক্ষা পায়নি। আল্লাহ তায়ালা পাপের কারণে তাদেরকে কঠিনভাবে পাকড়াও করেছিলেন। বস্তুত আল্লাহ শাস্তি প্রদানে অত্যন্ত কঠোর।
হে আল্লাহর নবী! ইহুদী এবং অন্যান্য কাফিরদের মধ্য থেকে যারা ‘বদর’ যুদ্ধের বিজয়কে কেন্দ্র করে মুসলমানদেরকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্ল করে, তাদেরকে বলুন, তোমরা অচিরেই দুনিয়াতে পরাজিত ও লাঞ্চিত হবে এবং কুফরির উপর মৃত্যুবরণ করার কারণে আখেরাতে জাহান্নামের মধ্যে সমবেত হবে। আর জাহান্নাম অত্যন্ত নিকৃষ্ট আবাসস্থল।
হে দাম্ভিক ইহুদী সম্প্রদায়! নিশ্চয় তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে দুইটি দলের মধ্যে, যারা ‘বদর’ যুদ্ধে পরস্পর মুখোমুখি হয়েছিল। একটি দল মুমিন, যারা লড়াই করছিল আল্লাহর পথে এবং অপর দল কাফির, যারা লড়াই করেছিল শয়তানের পথে। মুসলিম পক্ষকে শক্তিশালী করার জন্য আল্লাহ তায়ালা এমন একটি প্রক্রিয়া অবলম্বন করলেন, যার কারণে কাফির বাহিনী বাহ্যিক দৃষ্টিতে মুসলিম বাহিনীকে যুদ্ধের ময়দানে তাদের প্রকৃত সংখ্যার দ্বিগুণ দেখছিল। ফলে, কাফির বাহিনী ভয়ে ময়দান ছেড়ে পালিয়েছিল। আর আল্লাহ নিজ সাহায্য দ্বারা যাকে চান তাকে শক্তিশালী করেন। নিশ্চয় এতে রয়েছে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন লোকদের জন্য শিক্ষা। (আইসার আল-তাফাসীর: ১/২৮৯-২৯০, আল-তাফসীর আল-মুয়াস্সার: ১/৫১, আল-মুন্তাখাব: ১/৭১-৭২) ।
আয়াতের অস্পষ্ট শব্দের ব্যাখ্যা:
(إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا) ‘নিশ্চয় যারা কাফির’, আয়াতাংশ দ্বারা কাদেরকে বুঝানো হয়েছে? এ সম্পর্কে তিনটি মত পাওয়া যায়:
(ক) নাযরানের প্রতিনিধি দল এবং মদীনার ইহুদী, মুশরিক ও মুনাফিকদেরকে বুঝানো হয়েছে। (আইসার আল-তাফাসীর: ১/২৮৯) ।
(খ) শুধু নাযরানের প্রতিনিধি দলকে বুঝানো হয়েছে। বিভিন্ন কাহিনী থেকে স্পষ্ট হয় যে, নাযরান প্রতিনিধি দলের একজন আবু হারিসা ইবনু আলক্বামা তার ভাইকে বলেছিলো: আমরা জানি মোহাম্মদ সত্য নবী, কিন্তু তা যদি প্রকাশ করি তাহলে রোম সম্রাট আমাদেরকে যে সহায় সম্পত্তি দিয়েছে তা আমাদের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা এখানে ঘোষণা করেছেন যে, ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের আযাব থেকে রক্ষা করতে পারবে না।
(গ) ব্যাপকভাবে সকল কাফেরদেরকে বুঝানো হয়েছে; কারণ আয়াতে ব্যাপক অর্থবোধক ‘যারা’ শব্দটি এসেছে। আর নিয়ম হলো: “আয়াত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা হবে শব্দের ব্যাপকতার ভিত্তিতে, অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট খাস হওয়ার ভিত্তিতে নয়”। (আল-তাফসীর আল-কাবীর: ৭/১৫২) ।
তবে দুইটি কারণে তৃতীয় মতটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য:
(ক) এ অর্থটি ব্যাপক অর্থবোধক হওয়ার কারণে প্রথম দুইটি মতকেও অন্তর্ভূক্ত করে।
(খ) প্রায় সকল তাফসীর গ্রন্থেই তৃতীয় মতের আলোকে উল্লেখিত আয়াতের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। (আল্লাহই ভালো জানেন) ।
(قُلْ لِلَّذِينَ كَفَرُوا) ‘আপনি কাফেরদেরকে বলুন’, বার নাম্বারের অত্র আয়াতাংশে কাফের দ্বারা মদীনার ‘কাইনুকা’ গোত্রের ইহুদীদেরকে বুঝানো হয়েছে। (আইসার আল-তাফাসীর: ১/২৮৯) । তবে এখানেও ব্যাপকার্থে সকল কাফেরদেরকে উদ্দেশ্য করা যেতে পারে।
(فِئَتَيْنِ الْتَقَتَا) ‘দুইটি দল মুখোমুখি হয়েছিল’, এখানে দুইটি দল দ্বারা ‘মুসলিম’ এবং ‘কাফির’ দলকে বুঝানো হয়েছে, যারা বদরের যুদ্ধে মুখোমুখি হয়েছিল। (আইসার আল-তাফাসীর: ১/২৮৯) ।
(يَرَوْنَهُمْ مِثْلَيْهِمْ رَأْيَ الْعَيْنِ) অত্র আয়াতাংশের কয়েকটি অর্থ হতে পারে:
(ক) বদর যুদ্ধে কাফির বাহিনী বাহ্যিক দৃষ্টিতে মুসলিম বাহিনীকে মুসলমানদের প্রকৃত সংখ্যার দ্বিগুণ দেখেছিল। অর্থাৎ: প্রায় সাতশ দেখেছিল।
(খ) বদর যুদ্ধে কাফির বাহিনী বাহ্যিক দৃষ্টিতে মুসলিম বাহিনীকে কাফিরদের প্রকৃত সংখ্যার দিগুণ দেখেছিল। অর্থাৎ: দুই হাজার দেখেছিল।
(গ) বদর যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী বাহ্যিক দৃষ্টিতে কাফির বাহিনীকে মুসলমানদের সংখ্যার দ্বিগুণ দেখেছিল। অর্থাৎ: প্রায় সতশ দেখেছিল। (তাফসীর আল-বাইযাভী: ২/৮)।
এখানে তৃতীয় মতটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য; কারণ এ মতের স্বপক্ষে সূরা আনফালে একটি আয়াত পাওয়া যায়, যেখানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
(فَإِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ مِائَةٌ صَابِرَةٌ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ وَإِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ أَلْفٌ يَغْلِبُوا أَلْفَيْنِ بِإِذْنِ اللَّهِ) [سورة الأنفال:৬৬].
অর্থাৎ: “অতএব তোমাদের মধ্যে যদি একশ’ ধৈর্যশীল মানুষ থাকে, তাহলে তারা দুশ’র উপর জয়ী হবে; আর যদি থাকে তোমাদের মধ্যে এক হাজার ধৈর্যশীল ব্যক্তি, তাহলে তারা আল্লাহর হুকুমে দু’হাজারের উপর বিজয়ী হবে” (সূরা আনফাল: ৬৬) ।
আয়াতের সাথে পূর্বের আয়াতের সম্পর্ক:
(১-৬) নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালার একাত্ববাদের প্রমাণ এবং (৭-১০) নাম্বার আয়াতে যারা দলীল গ্রহণের ক্ষেত্রে ছলছাতরী পূর্বক ‘মুহকাম’ আয়াতকে বাদ দিয়ে ‘মুতাশাবিহ’ আয়াতকে গ্রহণ করে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। আর অত্র আয়াতসমূহে যারা একাত্ববাদকে অস্বীকার করবে এবং ‘মুতাশাবিহ’ আয়াত নিয়ে ছলছাতরী করবে দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের ভয়াবহ পরিণতির আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং অত্র আয়াতসমূহ পূর্বের আয়াতের পরিপূরক। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩/১৫৯) ।
আয়াতে তাশবীহ বা উপমার ব্যাখ্যা:
আল্লাহ তায়ালার নিয়ম হলো: অদৃশ্য বিষয়কে দৃশ্যমান বিষয়ের সাথে উপমা দিয়ে বিষয়টিকে স্পষ্টভাবে মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া। এখানেও (১০-১১) নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নাজরানের খৃষ্টানদেরকে ফেরআউন এবং তার পূর্ববর্তী মিথ্যাচারী জাতির সাথে উপমা প্রদানের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন ফেরআউন ও পূর্ববর্তী পাপিষ্ট জাতির মতো নাজরানের খৃষ্টানদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিও আল্লাহর শাস্তি এসে গেলে কোন উপকারে আসবে না।
লক্ষনীয় যে, বালাগাতের পরিভাষায় একটি উপমাতে চারটি বিষয় থাকতে হয়: (ক) যাকে উপমা দেওয়া হয়, (খ) যার সাথে উপমা দেওয়া হয়, (গ) উপমা দেওয়ার হরফ এবং (ঘ) উপমার উদ্দেশ্য। বালাগাতের আলোকে (১০-১১) আয়াতে বর্ণিত উপমার দুইটি ব্যখ্যা করা যায়:
এক নাম্বার ব্যাখ্যা হলো:
যাকে উপমা দেওয়া হয়েছে: নাজরানের খৃষ্টানগণ।
যার সাথে উপমা দেওয়া হয়েছে: ফেরআউন এবং তার পূর্ববর্তী আদ, সামূদ ইত্যাদি জাতি।
উপমা প্রদানের হরফ: (كَ) ‘কা’ (মত)।
উপমা প্রদানের উদ্দেশ্য: আল্লাহর শাস্তি এসে গেলে ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন উপকারে না আসা।
অর্থাৎ: আল্লাহর শাস্তি এসে গেলে ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন উপকারে না আসার দৃষ্টিকোন থেকে নাজরানের খৃষ্টানদের উদাহরণ ফেরআউন এবং তার পূর্ববর্তী আদ, সামূদ ইত্যাদি জাতির মতো। ফেরআউন এবং তার পূর্ববর্তী আদ, সামূদ ইত্যাদি জাতিকে যেমন তাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারেনি, তেমনিভাবে নাজরানের খৃষ্টানদেরকেও তাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। (আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন) ।
দুই নাম্বার ব্যাখ্যা হলো:
যাকে উপমা দেওয়া হয়েছে: নাজরানের খৃষ্টানগণ।
যার সাথে উপমা দেওয়া হয়েছে: ফেরআউন এবং তার পূর্ববর্তী আদ, সামূদ ইত্যাদি জাতি।
উপমা প্রদানের হরফ: (كَ) ‘কা’ (মত)।
উপমা প্রদানের উদ্দেশ্য: ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি নিয়ে অহংকার করা।
অর্থাৎ: ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি নিয়ে অহংকার করার দৃষ্টিকোন থেকে নাজরানের খৃষ্টানদের উদাহরণ ফেরআউন এবং তার পূর্ববর্তী আদ, সামূদ ইত্যাদি জাতির মতো। ফেরআউন এবং তার পূর্ববর্তী আদ, সামূদ ইত্যাদি জাতি যেমন তাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি নিয়ে অহংকার করতো, তেমনিভাবে নাজরানের খৃষ্টানরাও তাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি নিয়ে অহংকার করতো। (আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন) ।
তিন নাম্বার ব্যাখ্যা হলো:
ইমাম ওহাবা জুহাইলী (র.) তার তাফসীর গ্রন্থে তাশবীহ এর আরেকটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন:
যাকে উপমা দেওয়া হয়েছে: নাজরানের খৃষ্টানগণ।
যার সাথে উপমা দেওয়া হয়েছে: ফেরআউন এবং তার পূর্ববর্তী আদ, সামূদ ইত্যাদি জাতি।
উপমা প্রদানের হরফ: (كَ) ‘কা’ (মত)।
উপমা প্রদানের উদ্দেশ্য: মোহাম্মদ (সা.) ও আল্লাহর আয়াতাবলীকে অস্বীকার করা।
অর্থাৎ: মোহাম্মদ (সা.) ও আল্লাহর আয়াতাবলীকে অস্বীকার করার দৃষ্টিকোন থেকে নাজরানের খৃষ্টান অধিবাসীর উদাহরণ ফেরআউন এবং তার পূর্ববর্তী আদ, সামূদ ইত্যাদি জাতির মতো। ফেরআউন এবং তার পূর্ববর্তী আদ, সামূদ ইত্যাদি জাতি যেমন মুসা (আ.) ও আল্লাহ আয়াতাবলীকে অস্বীকার করতো, তেমনিভাবে নাজরানের খৃষ্টানরাও মোহাম্ম (সা.) ও আল্লাহর আয়াতাবলীকে অস্বীকার করতো। (আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন) ।
(১১-১২) নাম্বার আয়াত সংশ্লিষ্ট ঘটনা ও অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট:
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বদর যুদ্ধে বিজয়ের পর মদীনায় ফিরে ইহুদীদেরকে কায়নুকা গোত্রের একটি বাজারে জড়ো করে সবার উদ্দেশ্যে বললেন: হে ইহুদী সম্প্রদায়, কোরাইশদের মতো পরাজিত হওয়ার পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করো। এর জবাবে ইহুদীরা বললো: হে মোহাম্মদ, অনবিজ্ঞ কোরাইশ, যারা যুদ্ধ জানে না, তাদেরকে হারিয়ে তুমি এক ধরণের ধোঁয়াশার মধ্যে পড়ে গেছো। আল্লাহর কসম করে বলছি, তুমি যদি আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে, তাহলে বুঝতে আমরা কারা। আর আমাদেরকে নিয়ে এ ধরণের মন্তব্য করতে সাহস করতে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা ১১ এবং ১২ নাম্বার আয়াত অবতীর্ণ করে ইহুদীদের ঘৃণ্য মন্তব্যের উত্তর রাসূলুল্লাহ (সা.) কে শিক্ষা দিয়েছেন। (লুবাব আল-নুক‚ল: ৬০-৬১) ।
আয়াতাবলীর শিক্ষা:
১। দশ নাম্বার আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, মানুষ আল্লাহর শাস্তির উপযুক্ত হওয়ার মূল কারণ হলো: কুফরী ও আল্লাহর আবাধ্যতা। আর আল্লাহ তায়ালা যখন কাফিরদেরকে পাকড়াও করতে চান, তখন তদের ক্ষমতা, ধনসম্পদ, সন্তানসন্তুত ইত্যাদি তাদেরকে কোন উপকার করতে পারে না (আইসার আল-তাফাসীর, আল-জাযায়িরী: ১/২৯১)। যেমন: সূরা তাওবা এর ৮৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
﴿وَلَا تُعْجِبْكَ أَمْوَالُهُمْ وَأَوْلَادُهُمْ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ أَنْ يُعَذِّبَهُمْ بِهَا فِي الدُّنْيَا وَتَزْهَقَ أَنْفُسُهُمْ وَهُمْ كَافِرُونَ﴾ [سورة التوبة: ৮৫].
অর্থাৎ: “ওদের ধনসম্পদ এবং সন্তানসন্তুত যেন আপনাকে বিমুগ্ধ করতে না পারে; মূলত আল্লাহ তায়ালা এগুলোর মাধ্যমে তাদেরকে দুনিয়াতে শাস্তি দিতে চান এবং এমন এক অবস্থায় তাদের আত্মা বের হবে, যখন তারা পুরোপুরি কাফের থাকবে” (সূরা তাওবা: ৮৫) ।
এছাড়াও কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে দেখতে পাই কাফিররা যখন ধনসম্পদ ও সন্তানসন্তুত নিয়ে অহংকার করেছে, তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্তুত তাদেরকে তাঁর নৈকট্য লাভে মোটেই সহায়ক হবে না, বরং ঈমান ও সৎআমলই তাঁর নৈকট্য লাভ করাতে পারে। যেমন: সূরা সাবা এর (৩৫-৩৭) নাম্বার আয়াতে এসেছে:
﴿وَقَالُوا نَحْنُ أَكْثَرُ أَمْوَالًا وَأَوْلَادًا وَمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِينَ (৩৫) قُلْ إِنَّ رَبِّي يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ (৩৬) وَمَا أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ بِالَّتِي تُقَرِّبُكُمْ عِنْدَنَا زُلْفَى إِلَّا مَنْ آمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَأُولَئِكَ لَهُمْ جَزَاءُ الضِّعْفِ بِمَا عَمِلُوا وَهُمْ فِي الْغُرُفَاتِ آمِنُونَ (৩৭)﴾ [سورة سبأ: ৩৫-৩৭].
অর্থাৎ: “তারা আরো বলে, আমরা এ দুনিয়াতে ধনে জনে অধিকতর সমৃদ্ধশালী, সুতরাং পরকালে আমাদেরকে কোন আযাব দেওয়া হবে না। হে নবী, আপনি ওদেরকে বলে দিন, আমার রব যাকে ইচ্ছা করেন তার রিযক প্রশস্ত করে দেন, যাকে ইচ্ছা সংকুচিত করে দেন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই এটা জানে না। তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্তুত এমন কিছু নয় যে এর মাধ্যমে তোমরা আমার নৈকট্য লাভ করবে। তবে, যে ব্যক্তি ঈমান এনেছে এবং নেকআমল করেছে, তাদের জন্য কিয়ামতে দিগুণ পুরস্কার রয়েছে। তারা তাদের নেকআমলের কারণে জান্নাতের বালাখানায় নিরাপদে অবস্থান করবে” (সূরা সাবা: ৩৫-৩৭) ।
২। দশ নাম্বার আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সমসাময়ীক নাজরানের কাফেরদের অপরাধের কারণে তাদের উপর সংঘঠিত শাস্তির বর্ণনার পর এগার নাম্বার আয়াতে ফেরআউন সম্প্রদায় এবং তার পূর্বের আদ, সামূদ, আসাহাবুল আইকা, আসহাবুল মুতাফিকাত, আসহাবুর রাস্স ইত্যাদি কাফের সম্প্রদায়ের উপর শাস্তির বর্ণনা প্রদানের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা একটি চিরন্তন নিয়মের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, আর তা হলো: “অপরাধী তার অপরাধের শাস্তি পাবেই, সে যে যুগের অথবা যে গোত্রেরই হোক না কেন” (তাফসীর আল-মুনীর, জুহাইলী: ৩/১৬৩)। এর মাধ্যমে আল্লাহ মক্কার কোরাইশ গোত্র সহ সমগ্র মানব জাতিকে সতর্ক করেছেন যে, তারাও অপরাধ করলে শাস্তি পাবেই। (আল্লাহই ভালো জানেন) ।
একই কথা আল্লাহ তায়ালা সূরা আনফাল এর (৫১-৫৪) আয়াতে দুই বার বর্ণনা করেছেন:
﴿ذَلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيكُمْ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِظَلَّامٍ لِلْعَبِيدِ (৫১) كَدَأْبِ آلِ فِرْعَوْنَ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ كَفَرُوا بِآيَاتِ اللَّهِ فَأَخَذَهُمُ اللَّهُ بِذُنُوبِهِمْ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ شَدِيدُ الْعِقَابِ (৫২) ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ لَمْ يَكُ مُغَيِّرًا نِعْمَةً أَنْعَمَهَا عَلَى قَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ وَأَنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ (৫৩) كَدَأْبِ آلِ فِرْعَوْنَ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ كَذَّبُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ فَأَهْلَكْنَاهُمْ بِذُنُوبِهِمْ وَأَغْرَقْنَا آلَ فِرْعَوْنَ وَكُلٌّ كَانُوا ظَالِمِينَ (৫৪)﴾ [سورة الأنفال: ৫১-৫৪].
অর্থাৎ: “আসলে এটা হচ্ছে তোমাদের হাতের কামাই, আল্লাহ তায়ালা কখনও তাঁর বান্দার উপর যুলম করেন না। এরা ফেরআউন এবং তার পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের মতোই, তারা আল্লাহর আয়াতাবলীকে অস্বীকার করেছে, ফলে তাদের অপরাধের দরুন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে পাকড়াও করলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা শক্তিশালী, কঠোর শাস্তিদানকারী। এটা এ কারণে যে, আল্লাহ তায়ালা কোন কাওম থেকে তাঁর প্রদত্ত নেয়ামত ছিনিয়ে নেন না, যতোক্ষণ না তারা অপরাধে জড়িয়ে নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করে। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সবকিছু শুনেন, জানেন। এরা ফেরআউন এবং তার পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের মতোই, যারা তাদের মালিকের আয়াতাবলীকে অস্বীকার করেছে, অতঃপর আমি তাদের অপরাধের কারণে তাদেরকে ধ্বংস করে দিলাম এবং ফেরআউন সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে দিয়েছি, মূলত তারা সবাই যালেম ছিলো” (সূরা আনফাল: ৫১-৫৪) ।
৩। বার এবং তের নাম্বার আয়াতে ইসলামের প্রথম যুদ্ধ ‘গাযওয়ায়ে বদর’ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অত্র আয়াতদ্বয়ে কয়েকটি বিষয় ফুটে উঠে:
(ক) বদরের যুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার পূর্বে আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ (সা.) কে প্রতিশ্রæতি এবং সংবাদ দিয়েছিলেন যে, এ যুদ্ধে কাফিররা পরাজিত হবে এবং মুসলমানরা বিজয় লাভ করবে। এ সম্পর্কে ওমর ইবনু খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত ‘সহীহ মুসলিম’ এ একটি হাদীস এসেছে:
“جَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ -صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- يُرِينَا مَصَارِعَ الْقَوْمِ لَيْلَةَ بَدْرٍ، هَذَا مَصْرَعُ فُلَانٍ غَدًا إِنْ شَاءَ اللَّهُ، وَهَذَا مَصْرَعُ فُلَانٍ غَدًا إِنْ شَاءَ اللَّهُ، فَمَا أَمَاطَ أَحَدٌ مِنْهُمْ عَنِ الْمَصْرَعِ الَّذِي قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ” (مسند البزار: ২২২).
অর্থাৎ: “রাসূলুল্লাহ (সা.) বদর যুদ্ধের আগের রাতে আমাদেরকে কোরাইশ গোত্রের যোদ্ধাদের ধরাশায়ী হয়ে কতল হওয়ার জায়গাগুলো এভাবে দেখালেন যে, আল্লাহর ইচ্ছায় আগামীকাল অমুকের মৃত্যু এখানে হবে এবং অমুকের মৃত্যু ওখানে হবে। (রাভী ওমার (রা.) বলেন) রাসূলুল্লাহ (সা.) যার মৃত্যুর যে জায়গার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বদরের যুদ্ধে তার মৃত্যু সেখানেই হয়েছে” (মুসনাদে বাজ্জার: ২২২) ।
(খ) মক্কার মুশরিকরা বদর যুদ্ধে যেমন চরমভাবে পরাজিত হয়েছে, তেমনিভাবে আখেরাতেও তারা সবচেয়ে নিকৃষ্ট আবাসস্থল জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
(গ) বদর যুদ্ধ দুই দলের মধ্যে সংগঠিত হয়েছে: একদল মুসলিম, যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করেছে এবং আরেকদল কাফির, যারা শয়তানের পথে যুদ্ধ করেছে।
(ঘ) আল্লাহ তায়ালা বদরের যুদ্ধে মুসলমানদেরকে সরাসরি সাহায্য করেছেন। মূলত বদরের যুদ্ধে মুসলিম যোদ্ধাদের সংখ্যা ছিলো মাত্র ৩১৩ জন এবং কাফেরদের সংখ্যা ছিলো প্রায় ১০০০, যা মুসলিম যোদ্ধাদের সংখ্যার তিনগুন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বিশেষ কুদরাতে যুদ্ধক্ষেত্রে কাফেরদের সংখ্যাকে মুসলমানের চোখে তাদের (মুসলমানদের) সংখ্যার দ্বিগুণ দেখিয়েছেন, অপরদিকে মুসলমানদের সংখ্যাকে কাফেরদের চোখে তাদের (কাফিরদের) সংখ্যার দ্বিগুণ দেখিয়েছেন। এ সম্পর্কে সূরা আনফালের অনেকগুলো আয়াতের মধ্যে একটি হলো:
﴿وَإِذْ يُرِيكُمُوهُمْ إِذِ الْتَقَيْتُمْ فِي أَعْيُنِكُمْ قَلِيلًا وَيُقَلِّلُكُمْ فِي أَعْيُنِهِمْ لِيَقْضِيَ اللَّهُ أَمْرًا كَانَ مَفْعُولًا وَإِلَى اللَّهِ تُرْجَعُ الْأُمُورُ﴾ [سورة الأنفال: ৪৪].
অর্থাৎ: “স্মরণ করো, যখন তোমরা যুদ্ধের ময়দানে তাদের সামনাসামনি হলে, তখন আল্লাহ তায়ালা তোমাদের চোখে তাদের সংখ্যাকে কম করে দেখালেন এবং যুদ্ধের পূর্বে তাদের চোখে তিনি তোমাদের সংখ্যা দেখালেন কম, যেন আল্লাহ তায়ালা তাই ঘটিয়ে দেখান যা কিছু তিনি ঘটাতে চান; মূলত আল্লাহ তায়ালার দিকেই সব কিছু প্রত্যাবর্তিত হবে” (সূরা আনফাল: ৪৪) ।
উল্লেখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ওহাবা জুহাইলী (র.) বলেন: আল্লাহ যুদ্ধের ময়দানে মুসলমানদের চোখে কাফেরদের সংখ্যাকে কম করে দেখালেন। কাফেরদেরকে যুদ্ধের ময়দানে নামিয়ে ধরাশায়ী করানোর জন্য আল্লাহ তায়ালা যুদ্ধের পূর্বে কাফেরদের চোখে মুসলমানদের সংখ্যা কম করে দেখালেন এবং যখন তারা যুদ্ধে অবতরণ করলো, তখন মুসলমানদের সংখ্যাকে কাফেরদের চোখে বাড়িয়ে দেখালেন, যা সূরা আলে ইমরানের তের নাম্বার আয়াত থেকে বুঝা যায়। (তাফসীর আল-মুনীর: ১০/১৬) ।
(ঙ) যুদ্ধের বিজয় বাহ্যিক সংখ্যা ও ক্ষমতার আধিক্য দিয়ে হয় না, বরং যুদ্ধের বিজয় হয় আল্লাহর প্রতি ঈমানের দৃঢ়তা এবং তাঁর সাহায্যের ভিত্তিতে। বদরের যুদ্ধে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের পক্ষে বিজয় দান করেছেন দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য। যেমন: সূরা মোহাম্মদ এ আল্লাহ বলেন:
﴿يا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ تَنْصُرُوا اللَّهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدامَكُمْ﴾ [سورة محمد: ৭].
অর্থাৎ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে আল্লাহকে সহযোগিতা, তাহলে তিনিও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তিনি তোমাদের তোমাদের পা-সমূহকে সুদৃঢ় রাখবেন” (সূরা মোহাম্মদ: ৭) ।
এ সম্পর্কে আরেকটি আয়াতে এসেছে:
﴿وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِينَ﴾ [سورة الروم: ৪৭].
অর্থাৎ: “ঈমানদারদের সাহায্য করা আমার উপর কর্তব্য” (সূরা রূম: ৪৭) ।
(চ) উল্লেখিত আয়াতদ্বয়ে এমন দুইটি বিষয় পরিলক্ষিত হয়, যা কোরআন আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রেরিত হওয়ার প্রমাণ বহণ করে:
(র) বদরের যুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার পূর্বে মুসলমানদের পক্ষে বিজয়ের সুসংবাদ প্রদান করা, যা মানুষের স্বাভাবিক রীতিনীতির বিপরীত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বদরের যুদ্ধের পূর্বের রাতে সাহাবাদেরকে বিজয়ের সুসংবাদ দিয়েছিলেন, যার আলোচনা ইতিপূর্বে করা হয়েছে।
(রর) আল্লাহ তায়ালার বিশেষ সাহায্যে স্বল্প সংখ্যক মুসলিম যোদ্ধা বেশী সংখ্যক কাফির যোদ্ধার বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করা। (আইসার আল-তাফাসীর, জাযায়িরী: ১/২৯১/ তাফসীর আল-মুনীর, ওহাবা জুহাইলী: ৩/১৬৩) ।
(ছ) তের নাম্বার আয়াতের শেষাংশ থেকে বুঝা যায়, বদরের যুদ্ধের মতো যুগান্তকারী ঘটনা থেকে সবাই শিক্ষা গ্রহণ করবে না। যারা তাকওয়া ভিত্তিক জ্ঞানে গুণান্বিত, কেবল তারাই তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে।
৪। উল্লেখিত আয়াতাবলী থেকে বর্তমান যুগের ইসলামী দলগুলোর জন্য অন্যতম একটি শিক্ষা হলো: বিজয়ের জন্য ঈমান ও ইসলামের বিধানের উপর দৃঢ়ভাবে অবস্থানপূর্বক আল্লাহর উপর ভরসা করা। আমাদের সমাজে দেখা যায় কিছু কিছু ইসলামী দল বিজয় লাভের কর্মপদ্ধতি হিসেবে ইসলামী বিধানে একটু কমবেশ করে একটি বাতিল শক্তির সাথে সমঝোতা করে, যতসব বেপরোয়া কর্মসূচী দিয়ে সমাজকে অস্থির করে তুলে। অথচ কোরআনের আয়াত থেকে বুঝা যায়, বিজয় লাভের অন্যতম শর্ত হলো: সাচ্চা ঈমান এবং আল্লাহর উপর ভরসা। আর এ পদ্ধতি অবলম্ভন করেই যুগে যুগে ইসলামের পক্ষে বিজয় এসেছে। (আল্লাহই ভালো জানেন) ।
আয়াতাবলীর আমল:
(ক) ধনসম্পদ, সন্তানসন্তুত এবং ক্ষমতা নিয়ে বড়াই না করা।
(খ) ধনসম্পদ, সন্তানসন্তুত এবং ক্ষমতা আল্লাহ তায়ালার শাস্তি থেকে কাউকে রক্ষা করতে পারে না, এ কথা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করা।
(গ) অপরাধী তার অপরাধের শাস্তি পাবেই, এ কথা বিশ্বাস করে দৈনন্দিন জীবনযাপন করা।
(ঘ) বিজয়ের জন্য বাহ্যিক ক্ষমতা ও সংখ্যাধিক্যের উপর নির্ভর না করে, সঠিক পথে থেকে আল্লাহর উপর ভরসা করা।
Masallah khub sundor hoyeche tafsir gulo porte onek valo lagche allah apnake r hidayet din tafsir likhar jonno duwa kori insaallah valo thakben jajakallah Khairan
জাযাকাল্লাহু খাইরান , দোয়ার দরখস্ত।