الم (1) اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ (2) نَزَّلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَأَنْزَلَ التَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيلَ (3) مِنْ قَبْلُ هُدًى لِلنَّاسِ وَأَنْزَلَ الْفُرْقَانَ إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَاللَّهُ عَزِيزٌ ذُو انْتِقَامٍ (4) إِنَّ اللَّهَ لَا يَخْفَى عَلَيْهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ (5) هُوَ الَّذِي يُصَوِّرُكُمْ فِي الْأَرْحَامِ كَيْفَ يَشَاءُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (6) [سورة آل عمران: 1-6]
আয়াতাবলীর আলোচ্য বিষয়: আল্লাহর একাত্ববাদের দলীল।
আয়াতাবলীর সরল অনুবাদ:
(১) আলিফ লা-ম মী-ম।
(২) আল্লাহ, তিনি ছাড়া (সত্য) কোন ইলাহ নেই; তিনি চিরঞ্জীব, চির প্রতিষ্ঠিত ধারক।
(৩) তিনি তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যথাযথভাবে, এর পূর্বে যা এসেছে তার সত্যায়নকারী হিসেবে এবং নাযিল করেছেন তাওরাত ও ইনজীল।
(৪) ইতঃপূর্বে মানুষের জন্য হেদায়েত স্বরুপ। আর তিনি ফুরক্বান নাযিল করেছেন। নিশ্চয় যারা অস্বীকার করে আল্লাহর আয়াতসমূহ, তাদের জন্যই রয়েছে কঠিন আযাব। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধগ্রহণকারী।
(৫) নিশ্চয় আল্লাহ, তাঁর নিকঠ গোপন থাকে না কোন কিছু যমীনে এবং না আকাশে।
(৬) তিনি এমন সত্বা, যিনি মার্তৃগর্ভে তোমাদের আকৃতি গঠন করেন যেভাবে তিনি চান, তিনি ছাড়া (সত্য) কোন ইলাহ নেই, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
আয়াতাবলীর ভাবার্থ:
নাজরান থেকে একদল খ্রীষ্টান রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে তর্কবিতর্কের মাধ্যমে ঈসা (আ.) এর জন্য উলুহিয়্যাহ সাব্যস্ত করতে চাইলে আল্লাহ তায়ালা জিবরীল (আ.) এর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহকে (সা.) জানিয়ে দিলেন: আলিফ লা-ম মী-ম। আল্লাহই হলেন একমাত্র ইলাহ বা মাবূদ, তিনি ছাড়া (সত্য) কোন মাবূদ নেই। এর স্বপক্ষে দলীল হলো:
(ক) আল্লাহ তায়ালা চিরঞ্জীব এবং সৃষ্টি জগতের চির প্রতিষ্ঠিত ধারক ও ব্যাবস্থাপক হওয়ার কারণে একমাত্র তিনিই মাবূদ হওয়ার যোগ্য। ঈসা (আ.) এর মধ্যে অত্র গুণটি না থাকার কারণে সে মাবূদ হওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
(খ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যথাযথভাবে, যা কখনও কোন ধরণের বাতিলের ছোয়া পায়নি এবং তা মূসা (আ.) এর উপর অবতীর্ণ হওয়া তাওরাত ও ঈসা (আ.) এর উপর অবতীর্ণ হওয়া ইনজীল সহ পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবের উপর সত্যায়নকারী। এ কোরআনই একমাত্র আল্লাহকেই সর্বদা মাবূদ হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।
(গ) তিনি এমন সত্বা, যিনি মার্তৃগর্ভে তোমাদের আকৃতি গঠন করেন যেভাবে তিনি চান, তিনি ছাড়া (সত্য) কোন ইলাহ নেই, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আর ঈসা (আ.) তার মা মারইয়ামের গর্ভে আল্লাহর ইশারায় সৃষ্টি হয়েছে। এমন গুণের মানুষ কখনও ইলাহ হতে পারে না এবং ইলাহের পুত্রও হতে পারে না।
(ঘ) নিশ্চয় আল্লাহ, আকাশ এবং যমীনের কোন কিছু তাঁর নিকট গোপন থাকে না। আর ঈসা (আ.) সব জায়গার খোজ খবর রাখতে পারতো না। সুতরাং সে ইলাহ হতে পারে না এবং ইলাহের পুত্রও হতে পারেন না।
আর আল্লাহ তায়ালা ফুরক্বান নাযিল করেছেন, যা হক্ক বাতিলের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী। কোরআন বলেছে: আল্লাহ হলেন প্রথম, যার পূর্বে কিছুই ছিল না, তিনিই শেষ যার পরে কিছু বাকী থাকবে না। তিনি সবাইকে রিযক দেন এবং কারো প্রতি মুখাপেখী নয়, অপরদিকে ঈসা (আ.) সহ সৃষ্টিকুলের সবকিছু তাঁর প্রতি মুখাপেখী। নিশ্চয় যারা আল্লাহর একাত্ববাদ সম্পর্কিত আয়াতাবলীকে অস্বীকার করে এবং অন্য কাউকে তাঁর সাথে ইলাহ হিসেবে শরীক করে, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন আযাব। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধগ্রহণকারী। (আইসার আল-তাফাসীর: ১/২৮৪, আল-তাফসীর আল-মোয়াস্সার: ১/৫০, আল-মোন্তাখাব: ৭০) ।
আয়াতাবলীর অস্পষ্ট শব্দের ব্যাখ্যা:
(الم) ‘আলিফ লা-ম মী-ম’, এগুলোকে ‘হুরূফ আল-মুক্বাত্তায়াত’ বলা হয়। কোরআন মাজীদের ২৯টি সূরা এ হুরূফ দিয়ে শুরু হয়েছে। প্রথম সূরা হলো ‘সূরা বাক্বারা’ এবং সর্বশেষ সূরা হলো ‘সূরা ক্বলাম’। যেহেতু এ মুকাত্তায়াত হুরূফের কোন ব্যাখ্যা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা.) থেকে আসেনি, সেহেতু এগুলোকে মুতাশাবিহ আয়াতের অন্তর্ভূক্ত ধরা হয়। এজন্য সকল তাফসীর গ্রন্থে মুকাত্তায়াত হরফগুলোর তাফসীর না করে ‘এ সম্পর্কে আল্লাহই ভালো জানেন’ বলা হয়েছে। তবে কোন কোন তাফসীরকারক এগুলো সূরার শুরুতে উল্লেখ করার দুইটি উপকারিতা বর্ণনা করেছেন:
(ক) যখন মুশরিকরা কোরআনের আকর্ষণের ভয়ে তা শোনা থেকে বিরত থাকতো, তখন আল্লাহ তায়ালা কোরান মাজীদের সূরাগুলোকে বিচ্ছিন্ন হরফ দিয়ে শুরু করার মাধ্যমে তার ছন্দের মধ্যে নতুনত্ব আনয়নের কারণে তারা কোরআন শোনার প্রতি আগ্রহী হয়েছে। ফলে, তাদের অনেকেই কোরআন শুনে তার প্রতি ঈমান গ্রহণ করেছে।
(খ) মুশরিকরা কোরআন মাজীদকে আল্লাহর বাণী হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করতো। আল্লাহ তায়ালা কোরআনের সূরাগুলো কিছু বিচ্ছিন্ন অক্ষর দিয়ে শুরু করার মাধ্যমে তাদেরকে জানিয়ে দিলেন যে, তোমরা যে কোরআনকে অস্বীকার করছো, তা অনুরুপ অক্ষর দিয়েই গঠিত হয়েছে। কোরআনকে আল্লাহর বাণী হিসেবে মেনে নিতে তোমাদের যদি কোন আপত্তি থাকে তাহলে এ ধরণের অক্ষরসমূহ দিয়ে তোমরাও অনুরুপ একটি কোরআন অথবা এর ছোট একটি সূরার মতো একটি সূরা রচনা করে নিয়ে আসো। (আইসার আল-তাফসীর: ১/১৮-১৯) ।
(الْكِتَابَ) ‘কিতাব’, সকল তাফসীরকারন একমত যে, ‘কিতাব’ দ্বারা ‘কোরআন’ কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।
(الْفُرْقَانَ) ‘আল-ফুরক্বান’, আয়াতাংশ দ্বারা উদ্দেশ্য কি? এ ব্যাপারে তাফসীরকারকদের থেকে দুইটি মত পাওয়া যায়:
(ক) ‘ফুরক্বান’ দ্বারা ‘কোরআন’ কে বুঝানো হয়েছে। (আইসার আল-তাফাসীর: ১/২৮৩) ।
(খ) ‘ফুরক্বান’ দ্বারা পূর্ববর্তী যুগের সকল আসমানী কিতাবকে বুঝানো হয়েছে; কারণ তিন নাম্বার আয়াতে প্রথমে ‘কিতাব’ বলে কোরআনের কথা বলে পরে ‘তাওরাত’ ও ‘ইনজীল’ কে উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর চার নাম্বার আয়াতে ‘ফুরক্বান’ শব্দ দিয়ে পূর্ববর্তী যুগের সকল আসমানী কিতাবকে বুঝানো হয়েছে। (তাফসীর আল-মুনীর: ৩/১৪৫) ।
আয়াতাবলী অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট:
ইমাম সুয়ূতী (র.) তার লুবাব গ্রন্থে রবী (র.) এবং মোহাম্মদ ইবনু সাহ্ল (র.) এর রেওয়ায়েতে উল্লেখ করেছেন যে, নাজরান থেকে একটি খৃষ্টান প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে ঈসা (আ.) এর ব্যাপারে তর্কে লিপ্ত হলে আল্লাহ তায়ালা অত্র সূরার প্রথম ৮০টি আয়াত অবতীর্ণ করে ঈসা (আ.) এর হাকীকাত এর ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য বিশ্ব বাসীকে জানিয়ে দিলেন। (লুবাব আল-নুক‚ল, আল-সুয়ূতী: ৬০) ।
ইমাম ওয়াহেদী (র.) বলেছেন, তাফসীরকারকগণ বলেন: নাজরান থেকে ষাট জনের একটি খৃষ্টান প্রতিনিধি দল আছরের সালাতের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে আগমণ করলেন। তাদের সকলেই নাযরানের নের্তৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। কতিপয় সাহাবী বলছিলেন এমন প্রতিনিধিদল আর কখনও দেখিনি। তারা মাসজিদে নবভীর ভিতরে সালাত আদায়ের জন্য দাড়ালে রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবাদেরকে বললেন: তাদেরকে সালাত আদায় করতে দাও। অতঃপর তারা পূর্ব দিকে মুখ করে সালাত আদায় করলো। সালাতের পরে তাদের মধ্য থেকে দুই জন রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে কথা বলতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তখন তাদের মধ্যে কথোপকথন হলো:
রাসূলুল্লাহ (সা.): তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো।
খৃষ্টান প্রতিনিধিদল: আমরা তোমার পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছি।
রাসূলুল্লাহ (সা.): তোমরা মিথ্যা বলেছো; কারণ তোমরা আল্লাহর জন্য সন্তান সাব্যস্ত করছো, ক্রুসের ইবাদত করছো এবং শুকরের গোস্ত ভক্ষণ করছো, যা ইসলামের পথে বাধা।
খৃষ্টান প্রতিনিধিদল: ঈসা আল্লাহর পুত্র না হয়ে থাকলে তার পিতার নাম কি?
রাসূলুল্লাহ (সা.): তোমরা কি জানো না যে পুত্র সাধারণত পিতার মতো হয়?
খৃষ্টান প্রতিনিধিদল: হ্যা, জানি।
রাসূলুল্লাহ (সা.): তোমরা কি জানো না যে আল্লাহ তায়ালা চিরঞ্জীব, তিনি কখনও মৃতবরণ করবেন না, অথচ ঈসা (আ.) একদিন মরে যাবেন?
খৃষ্টান প্রতিনিধিদল: হ্যা, জানি।
রাসূলুল্লাহ (সা.): তোমরা কি জানো না যে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি জগতের চির প্রতিষ্ঠিত ধারক ও ব্যাবস্থাপক?
খৃষ্টান প্রতিনিধিদল: হ্যা, জানি।
রাসূলুল্লাহ (সা.): ঈসা (আ.) কি উল্লেখিত একটির ব্যাপারেও ক্ষমতা রাখেন?
খৃষ্টান প্রতিনিধিদল: না।
রাসূলুল্লাহ (সা.): তোমরা কি জানো না যে আল্লাহ তায়ালা আহার ও পানাহার করেন না এবং তিনি ঈসা (আ.) কে মার্তৃগর্ভে তাঁর ইচ্ছমতো আকৃতি দান করেছেন?
খৃষ্টান প্রতিনিধিদল: হ্যা, জানি।
রাসূলুল্লাহ (সা.): তোমরা কি জানো না যে ঈসা এর মা তাকে আরো দশ নারীর মতোই তাকে গর্ভে ধারণ করেছেন, তাকে প্রসব করেছেন এবং অসহায় অবস্থায় তাকে আদরযতœ করে বড় করে তুলেছেন?
খৃষ্টান প্রতিনিধিদল: হ্যা, জানি।
রাসূলুল্লাহ (সা.): এতকিছু জানার পরেও তোমরা কিভাবে ঈসা (আ.) কে আল্লাহর পুত্র সাব্যস্ত করছো? এতে তারা সকলে চুপ হয়ে গেলো। তখন আল্লাহ তায়ালা অত্র সূরার প্রথম ৮০টি আয়াত অবতীর্ণ করে ঈসা (আ.) এর হাকিকত সম্পর্কে স্ববিস্তারে আলোচনা করেছেন। (আসবাব আল-নুযূল, ওয়াহেদী: ১০০) ।
আয়াতাবলীর শিক্ষা:
১। অত্র সূরার (১-৬) নাম্বার আয়াতে খৃষ্টানদের ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসের অসারতা তুলে ধরার পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের স্বপক্ষে চারটি প্রমাণ পেশ করা হয়েছে:
(ক) দুই নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা চিরঞ্জীব এবং সৃষ্টি জগতের চির প্রতিষ্ঠিত ধারক ও ব্যাবস্থাপক হওয়ার কারণে একমাত্র তিনিই মাবূদ হওয়ার যোগ্য। ঈসা (আ.) এর মধ্যে অত্র গুণটি না থাকার কারণে সে মাবূদ হওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
(খ) (৩-৪) নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যথাযথভাবে, যা কখনও কোন ধরণের বাতিলের ছোয়া পায়নি এবং তা মূসা (আ.) এর উপর অবতীর্ণ হওয়া তাওরাত ও ঈসা (আ.) এর উপর অবতীর্ণ হওয়া ইনজীল সহ পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবের সত্যায়নকারী। এ কোরআনই তাঁর একত্ববাদের স্বীকৃতি দিয়েছে।
(গ) পাঁচ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, আকাশ এবং যমীনের কোন কিছুই আল্লাহ তায়ালার নিকট গোপন থাকে না। আর ঈসা (আ.) সব জায়গার খোজ খবর রাখতে পারতো না। সুতরাং সে ইলাহ হতে পারে না এবং ইলাহের পুত্রও হতে পারেন না।
(ঘ) ছয় নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি এমন সত্বা, যিনি মার্তৃগর্ভে তাঁর ইচ্ছানুযায়ী সকল প্রাণীর আকৃতি গঠন করেন, তিনি ছাড়া (সত্য) কোন ইলাহ নেই, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আর ঈসা (আ.) তার মা মারইয়ামের গর্ভে আল্লাহর ইশারায় সৃষ্টি হয়েছে। এমন গুণের মানুষ কখনও ইলাহ হতে পারে না এবং ইলাহের পুত্রও হতে পারে না। (তাফসীর আল-মুনীর, ওহাবা আল-জুহাইলী: ৩/১৪৮) ।
২। তিন নাম্বার আয়াতের শেষাংশে কাফির মুশরিকদেরকে সতর্ক করা হয়েছে যে, নিশ্চয় যারা আল্লাহর একাত্ববাদ সম্পর্কিত উল্লেখিত প্রমাণসমূহকে অস্বীকার করবে এবং অন্য কাউকে তাঁর সাথে ইলাহ হিসেবে শরীক করবে, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন আযাব। (তাফসীর সা’দী: ১২১) ।
৩। তিন এবং চার নাম্বার আয়াতে দেখা যায়, ‘কোরআন’ অবতীর্ণের ক্ষেত্রে ‘বাবে তাফয়ীল’ এর সীগাহ এবং তাওরাত-ইনজীল সহ পূর্ববর্তী যুগের আসমানী কিতাবের ক্ষেত্রে ‘বাবে ইফয়াল’ এর সীগাহ ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে প্রশ্ন হতে পারে, ‘কোরআন’ এর ক্ষেত্রে ‘বাবে তাফয়ীল’ এর শব্দ এবং অন্যান্য আসমানী গ্রন্থের ক্ষেত্রে কেন ‘বাবে ইফয়াল’ এর শব্দ ব্যবহার করা হলো?
এর উত্তরে তাফসীরকারকগণ বলেন, ‘বাবে তাফয়ীল’ এর একটি খাসিয়াত হলো: ‘তাকসীর’ বা অধিক সংখ্যা বুঝানো এবং ‘বাবে ইফয়াল’ একটি খাসিয়াত ‘তাকলীল’ বা কম সংখ্যা বুঝানো। কোরআন মাজীদ দীর্ঘ ২৩ বছরের বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন স্থানে এবং বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ হয়েছে, তাই তার ক্ষেত্রে ‘বাবে তাফয়ীল’ এর সীগাহ ব্যবহার করা হয়েছে। অপরদিকে তাওরাত-ইনজীল সহ অন্যান্য আসমানী কিতাব একই সময়ে এক বারে অবতীর্ণ হয়েছে, তাই তাদের ক্ষেত্রে ‘বাবে ইফয়াল’ এর সীগাহ ব্যবহার করা হয়েছে। (আল-তাহরীর ওয়া আল-তানভীর, ইবনু আশুর: ৩/১৪৮) ।
আয়াতাবলীর আমল:
(ক) আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করা।
(খ) ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস (আল্লাহ, আল্লাহর পূত্র এবং আল্লাহর স্ত্রী) থেকে নিজেকে সংরক্ষণ করা। খৃষ্টানরা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষাবৃত্তি, অনুদান, চিকিৎসা, ফ্রি বই বিতরণ ইত্যাদি সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মুসলমানদের উচিৎ ঈমান রক্ষার তাকীদে এ সুবিধাগুলোকে পরিত্যাগ করা।