সূরা নাযিয়াত এর (৪৩-৪৬) আয়াত অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট:
আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বার বার কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে আল্লাহ তায়ালা অত্র সূরার শেষের চার আয়াত অবতীর্ণ করে জানিয়ে দেন যে কিয়ামত কখন হবে সে সম্পর্কে কেবল আল্লাহ তায়ালাই জানেন।
ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন: মক্কার মুশরিকরা রাসূলুল্লাহকে উপহাস পূর্বক জিজ্ঞাসা করতো তুমি শুধু কিয়ামত কিয়ামত করো, তাহলে বলো: কখন তোমার কিয়ামত সংগঠিত হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা অত্র সূরার (৪৩-৪৬) আয়াত অবতীর্ণ করেছেন।
ইবনু জারীর আল-তবারী (র.) তার তাফসীর গ্রন্থে তারিক ইবনু শিহাব (র.) এর সনদে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) কিয়মতের কথা বেশী বেশী স্মরণ করার কারণে আল্লাহ তায়ালা (৪৩-৪৪) নাম্বার আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। (লুবাব আল-নুক‚ল, সুয়ূতী: ৩৫২-৩৫৩) ।
সূরা নাযিয়াত এর (৩৪-৪৬) আয়াতের শিক্ষা:
১। অত্র সূরার (৩৪-৩৬) আয়াতে হাশরের ময়দানের দুইটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে:
(ক) মানুষের সামনে যখন তাদের দুনিয়ার কৃতকর্ম পেশ করা হবে, তখন তারা তাদের কৃতকর্মগুলোকে চিনতে ও বুঝতে পারবে।
(খ) কাফির ও ঈমানদার সকলের সামনে জাহান্নামকে উপস্থাপন করা হবে। কাফিররা জাহান্নামের মধ্যে যত ধরণের শাস্তি আছে দেখতে পাবে এবং মুমিনরা জাহান্নামকে দেখে তাদেরকে যে নেয়ামত প্রদান করা হয়েছে তার মূল্য বুঝতে পারবে। (তাফসীর আল মুনীর: ৩০/৫৪) ।
২। অত্র সূরার (৩৭-৩৯) আয়াতে হাশরের ময়দানে বিচারের পর জাহান্নামী হওয়ার দুইটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে:
(ক) আল্লাহর বিধানের সীমালঙ্গন করা।
(খ) দুনিয়াকে আখেরাতের উপর প্রাধান্য দিয়ে দুনিয়া ভিত্তিক জীবনযাপন করা।
৩। অত্র সূরার (৪০-৪২) আয়াতে হাশরের ময়দানে বিচারের পর জান্নাতী হওয়ার দুইটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে:
(ক) কিয়ামতের দিনে আল্লাহর সামনে দাড়ানোকে ভয় করা।
(খ) কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজের আত্মাকে পুতপবিত্র রাখা।
৪। অত্র সূরার (৪৩-৪৬) আয়াতে কিয়ামত সংশ্লিষ্ট চারটি বিষয়ে কথা বলা হয়েছে:
(ক) কিয়ামতের প্রস্তুতির জন্য তা কখন সংগঠিত হবে তা জানার দরকার হয় না।
(খ) কিয়ামত কখন সংগঠিত হবে, তা কেবল আল্লাহ তায়ালা জানেন।
(গ) যারা কিয়ামতের দিনকে ভয় পাবে কেবল তাদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়া।
(ঘ) মানুষ যখন কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থা প্রত্যক্ষ করবে, তখন তাদের কাছে মনে হবে দুনিয়াতে তারা এক সকাল কিংবা এক সন্ধ্যা অবস্থান করেছিল।
৫। অত্র সূরার ৪৬নং আয়াতের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আখেরাতের জীবনের তুলনায় দুনিয়ার জীবন খুবই স্বল্প সময়ের। এ সম্পর্কে সূরা আহক্বাফ এর ৩৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে:
فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ أُولُو الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ وَلَا تَسْتَعْجِلْ لَهُمْ كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَ مَا يُوعَدُونَ لَمْ يَلْبَثُوا إِلَّا سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ بَلَاغٌ فَهَلْ يُهْلَكُ إِلَّا الْقَوْمُ الْفَاسِقُونَ (৩৫) [سورة الأحقاف: ৩৫].
অর্থাৎ: “অতঃপর (হে নবী!) তুমি ধৈর্য ধারণ করো যেমন করে ধৈর্য ধারণ করেছিলো আগের যুগের রাসূলগণ, তাদের ব্যাপারে তুমি তাড়াহুড়ো করো না; যেদিন সত্যিই তারা সেই আযাব নিজেদের সামনে দেখতে পাবে, যার ওয়াদা তাদের কাছে করা হয়েছিলো, তখন তাদের অবস্থা হবে এমন, যেন তারা দুনিয়ায় দিনের সামান্য কিছু মুহূর্ত অতিবাহিত করে এসেছে; মূলত এটা একটি ঘোষণামাত্র, এ ঘোষণা যারা প্রত্যাখ্যান করেছে, কেবল তারাই সেদিন ধ্বংস হবে” (সূরা আহক্বাফ: ৩৫) ।
৬। অত্র সূরার ৩৫নং আয়াতের অনুরুপ একটি আয়াত সূরা ফজর এর ২৩নং আয়াত এবং সূরা মুযাদালাহ এর ৬নং আয়াতে এসেছে এবং (৪২-৪৪) নাম্বার আয়াতের অনুরুপ আয়াত সূরা আরাফ এর ১৮৭ এবং সূরা লোক্বমান এর ৩৪নং আয়াতে এসেছে।
আয়াতাবলীর আমল:
(ক) কিয়ামতের ভয়াবহতার কথা মনে করে আখেরাত ভিত্তিক জীবনযাপন করা।
(খ) ইসলামের সীমরেখা অতিক্রম না করা।